আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের সমন্বিত জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশগুলোর মধ্যে ভারত দশম অবস্থানে উঠে এসেছে। এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জনমত জরিপ, সংবাদ বিশ্লেষণ ও বৈশ্বিক নীতিমালার ফলাফলের সম্মিলন থেকে তৈরি করা হয়েছে।
ভারত সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে, মুসলিম, খ্রিস্টান, দলিত সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদ দমনের ঘটনায় ভারতের গণতান্ত্রিক ইমেজ আরও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একদিকে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতি প্রশংসিত হলেও, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মৌলিক স্বাধীনতা হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের অন্য দেশগুলোর প্রসঙ্গে, প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন, যার কর্তৃত্ববাদী নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস সুপরিচিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এই দেশগুলো বিভিন্ন সামরিক ও কূটনৈতিক নীতির জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
Wikipedia অনুসারে, এই গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক জনমত এবং সংবাদ প্রতিবেদনসমূহের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি হয়, যা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ভারতের এই অবস্থান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত দেশের ভেতরের অসন্তোষ এবং আন্তর্জাতিক অখুশির কারণগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক প্রতিচ্ছবি
ভারত আজ বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে এক দ্বৈত প্রতিচ্ছবির ধারক। একদিকে, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশটি অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। অপরদিকে, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ দেশটির ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত সংস্থাগুলো ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ভারতের সীমান্তে উত্তেজনাও এর নেতিবাচক ভাবমূর্তির জন্য দায়ী। বিশেষ করে, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের বিরুদ্ধে এক ধরনের সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করেছে। কাশ্মীর ইস্যু, লাদাখ সংঘাত — এসব ঘটনা ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ভেতর থেকেও ভারতের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া, বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর রাজনৈতিক চাপে ফেলা এবং সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ করা, দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ইন্টারনেট বন্ধের সংখ্যা বিশ্বে সর্বোচ্চ, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার অন্যতম কারণ।
স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন এবং বিশ্ববাজারের প্রভাব এর মত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও, সামাজিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভারতের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অনেকখানি কমে গেছে।
ভারতকে নিয়ে বৈশ্বিক মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো ভারত সম্পর্কে মিলিতভাবে সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, আল-জাজিরা এবং গার্ডিয়ানের মত গণমাধ্যমে ভারতের ধর্মীয় সহিংসতা, বাকস্বাধীনতা সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত শিরোনাম হয়েছে।
নিউজউইক-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে সাংবাদিকতা এখন অনেকাংশেই চাপের মুখে রয়েছে। মুক্ত মত প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংবেদনশীল ইস্যুগুলোতে ভিন্নমত প্রকাশ করলে আইনগতভাবে হয়রানির মুখে পড়ার ঘটনা বেড়েছে।
বিশেষ করে কৃষক আন্দোলন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) বিরোধী বিক্ষোভ, এবং গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনগুলো আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন তুলেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মিডিয়া এসব ঘটনার মাধ্যমে ভারতের গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এর ফলে, ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার স্তর কিছুটা হলেও কমে গেছে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছুটা সতর্কতা দেখা যাচ্ছে।
ভারতের ধর্মীয় উত্তেজনা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
ভারতে ধর্মীয় উত্তেজনা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস হামলা ও সামাজিক বৈষম্যের ঘটনা বেড়েছে।
ধর্মীয় মেরুকরণ রাজনীতিতে পরিণত হওয়ায়, বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় ধর্মীয় পরিচয়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা ভারতীয় সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ভারতের সমাজে আরও বিভাজন সৃষ্টি হবে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতির কারণে দেশটি বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমালোচিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং প্রতিবাদ দমনের ঘটনাগুলো বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই সমালোচনার জবাবে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে উল্লেখ করা হলেও, বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া থেমে নেই।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.