আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। পৃথিবীতে ভালোবাসা নিয়ে রয়েছে কতশত গল্প, কাহিনী, উপন্যাস। কেউ ভালোবেসে করেছে ধ্বংস, কেউ ভালোবেসে গড়েছে স্বর্গ। মানুষের এমন ব্যাখ্যাতীত ভালোবাসা নিয়েই প্রতিবছরের এই আয়োজন।
ভালোবাসা আসে সবার জীবনে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সবথেকে ধনী ব্যক্তির মনেও আসে। তেমনি পৃথিবীর সকল খেলোয়াড়রাও পার করেন প্রেমের পর্ব। যখন আসে তখন লণ্ডভণ্ড করে আসে সবকিছু। এদের মধ্যে কিছু খেলোয়াড়ের ভালোবাসার প্রভাব পড়ে খেলোয়াড়ি জীবনেও। যখন ভালোবাসার জন্য বড় সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হননি কিছু খেলোয়াড়।
ভালোবাসা দিবসে নিজের ভালোবাসার জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করা পাঁচটি ভালোবাসার গল্প নিয়ে এই প্রতিবেদন সাজিয়েছে।
ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন গ্লেন ম্যাকগ্রা
১৯৯৫ সালে ম্যাকগ্রার সাথে পরিচয় হলো জেন স্টিলের। সম্পর্কে জড়ানোর বেশ কিছু পর জেন জানতে পেরেছিলেন, তিনি প্রেম করছেন আসলে এক ক্রিকেট তারকার সাথে! ১৯৯৭ সালে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লো জেনের। জেন সরে যেতে বলেছিলেন প্রেমিককে, ম্যাকগ্রা যাননি! এরপর শুরু হলো জেনের সঙ্গে গ্লেনের লড়াই- ক্যান্সারের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করলেন দুইজন।
স্ত্রীর লড়াই থেকে অনুপ্রাণিত হতেন ম্যাকগ্রা। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি ওভার, প্রতিটি বলে মিশে ছিল নিজের সাথে চলা যুদ্ধ। স্ত্রী অসুস্থ থাকা অবস্থাতেও খেলে গেছেন অনবরত। দিনশেষে আবার গিয়ে স্ত্রীকে সময় দিয়েছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে ইংল্যান্ডের কাছে হার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেন না ম্যাকগ্রা। প্রতি অ্যাশেজের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করতেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ৫, ইংল্যান্ড ০’।
সেই ম্যাকগ্রা ক্যারিয়ারে প্রথমবার অ্যাশেজ হারলেন ২০০৫ সালে এসে। এজবাস্টন টেস্ট শুরুর আগে অনুশীলনের সময় পড়ে থাকা বলের ওপর পা পড়ে চোট পেয়ে ছিটকে গেলেন। ম্যাকগ্রার সেই অদ্ভুত চোট ক্রিকেট মহাকাব্যেরই অংশ। সেই অ্যাশেজের পর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে ক্রিকেট থেকে বাইরে ছিলেন প্রায় ৮ মাসের মতো।
২০০৬-০৭ সালে ঘরের মাঠে ফিরতি অ্যাশেজে ম্যাকগ্রা ফিরলেন। ততদিনে ‘বুড়িয়ে গেছেন, আর দেওয়ার কিছু নেই’ রব উঠতে শুরু করেছে চারপাশে। উত্তর দেয়ার জন্য বোলিংয়ের চেয়ে ভালো আর কিছুই জানা ছিলোনা ম্যাকগ্রার। পাঁচ টেস্টে ২৩.৯০ গড়ে ২১ উইকেট নিয়ে আরেকবার যেন জানান দিয়েছিলেন, সামর্থ্য তখনও আছে তার।
অস্ট্রেলিয়া জিতল ৫-০ তে, ম্যাকগ্রার ‘৫-০’-তে! সিডনির শেষ টেস্ট দিয়েই বিদায় বললেন তিনি। স্ত্রী আর পরিবারের সামনে। টেস্ট ছাড়লেও ওয়ানডে খেলছিলেন। হাতছানি ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট শিকারের বিরল ক্লাবে নাম লেখানোর। তবে একদিন সকালে উঠে তার কাছে এসব মনে হতে থাকলো অর্থহীন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, ক্যারিবীয় বিশ্বকাপই হবে শেষ। ২৬ উইকেট নিলেন, ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে হলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। হলেন টুর্নামেন্ট সেরা।
ম্যাকগ্রা ক্রিকেট ছাড়লেন। আর জেন ছেড়ে গেলেন তাকে। দীর্ঘ ১০ বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০০৮ সালে মারা গেলেন জেন। তবে ঠিক ছেড়ে গেলেন না, থাকলেন ম্যাকগ্রার কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে। তাদের ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর হয়ে আসছে ‘গোলাপি টেস্ট’, স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বাড়াতে ও দাতব্য সংগ্রহে। এই টেস্টের একদিন পালন করা হয় ‘জেন ম্যাকগ্রা’ নামে।
ভালোবাসার জন্য ইমরান তাহিরের দেশত্যাগ
১৯৮৮ সালের কথা। তখন পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা যান ইমরান তাহির। ভারতীয় বংশদ্ভুত দিলরুবা থাকতেন সেখানেই। হুট করে দেখা হয় এ দুজনের। দিলরুবাকে দেখেই ভালো লেগে যায় তাহিরের। যদিও সিরিজ শেষে দেশে ফিরে আসতে হয় ইমরান তাহিরকে।
দেশে ফিরেও ইমরান যেন বুঁদ হয়ে ছিলেন দিলরুবাতেই। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল তার কথা। তখনই বুঝেছিলেন, প্রেমে পড়েছেন ইমরান। তবে তখন তো আর বর্তমান সময়ের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুগ ছিল না। অনেক কষ্ট করেই যোগাড় করেছিলেন দিলরুবার ফোন নম্বর।
ফোনে কথা বলতেন ইমরান-দিলরুবা। মাঝে মধ্যেই দিলরুবার সঙ্গে দেখা করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ছুটে গেছেন ইমরান। তবে সুমাইয়া কিন্তু একেবারেই ভাবেননি ইমরানের সঙ্গে তার প্রেম কিংবা বিয়ে হবে। কেননা পাকিস্তান দেশটা যে সুমাইয়ার একেবারেই পছন্দের ছিল না। বাধা ছিল ধর্মও।
কেননা ইমরান ইসলাম ধর্মের হলেও দিলরুবা ছিলেন হিন্দু। কিন্তু ওই যে বলা হয়, প্রেম মানে না কোনো ধর্ম। তাই তো দিলরুবা প্রেমে পড়ে গেলেন ইমরানের। তবে সমস্যা ছিল অন্য আরেকটি বিষয়। আর তা হলো দেশ ছাড়তে নারাজ ছিলেন জেদি সুমাইয়া। তাই ইমরান বেছে নিলেন অন্য পথ।
২০০৬ সালে পাকিস্তান ছাড়লেন ইমরান। কারণ সুমাইয়ার শর্তই যে, নিজের দেশে থাকতে পারবেন না ইমরান, ভালবাসলে স্ত্রীর দেশেই থাকতে হবে তাকে। প্রেমিকা দিলরুবাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বিয়ে করলেন ইমরান। বিয়ের পর মডেলিং ছেড়ে দিলেন সুমাইয়া।
ইমরান খানের জন্য ধর্ম বদল
খেলোয়াড়ি জীবনে সম্ভবত আর কোনো ক্রিকেটার পাকিস্তানের ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের মতো এত রমণীমোহন ক্যারিয়ার পাননি। মাঠের ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সেলিব্রিটি নারীর সঙ্গে জড়িয়ে হরহামেশাই সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন ইমরান।
পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কখনো বিয়ে করবেন না বলে জানালেও ১৯৯৫ সালের ১৬ মে ব্রিটিশ নারী জেমাইমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন সুদর্শন ইমরান খান। ব্রিটিশ ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমাইমা বয়সে ক্রিকেট তারকার চেয়ে প্রায় ২২ বছরের ছোট হলেও প্রেমের টানে পড়াশোনা অসম্পূর্ণ রেখেই বিয়ে করে ফেলেন।
শুধু তাই নয়, অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট ইমরানকে বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান জেমাইমা। সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির দেশ পাকিস্তানে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করাও শুরু করেন। দুই ছেলেসন্তানের জন্ম হয় তাঁদের দাম্পত্য জীবনে। তবে ২০০৪ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দুজনের। পাকিস্তান ছেড়ে আবার লন্ডনে গিয়ে বসবাস করা শুরু করেন জেমাইমা। এরপর আরো দুবার বিয়ে করা ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
ভালোবাসার জন্য শাহরিয়ার নাফিসের যুদ্ধ
জাতীয় দলে ঢোকার মাত্র বছরখানেক পরেই বিয়ে করে নিলেন শাহরিয়ার নাফিস। কিন্তু সেটা ভালো কাটেনি নাফিস এর জন্য। কেননা নাফিসের পরিবার থেকে নাফিসের স্ত্রী ঈশিতাকে মেনে নেয়নি, যদিও ঈশিতা খুব শিক্ষিত।
দীর্ঘদিন পরিবারের বাইরেই কাটাতে হয়েছে শাহরিয়ার নাফিস কে স্ত্রীকে নিয়ে। পরে অবশ্য ঠিকই মেনে নেয় তার পরিবার। ঈশিতা পেশায় একজন আইনজীবী। ঈশিতা তাসমিনের বাবা আবদুল মান্নান পাঠান গাজীপুর আওয়ামী লীগের সা্বেক সহ-সভাপতি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ঈশিতার বাবাও একজন আইনের লোক। তিনি গাজীপুর জেলার সরকারি উকিল। ঈশিতা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নও চেয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।