জুমবাংলা ডেস্ক : নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে তৈরি করা আবাসন ব্যবস্থা বসবাসের উপযোগী কি না তা দেখতে যাচ্ছেন কক্সবাজারের শরাণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা। ঘিঞ্চি শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
শনিবার ভোর ৫ টার পরে দুইজন নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট শরণার্থী শিবির থেকে রওনা দেন। এর আগে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন শিবিরের এসব রোহিঙ্গা নেতা উখিয়ায় পৌঁছান।
শনিবার ভোরে ভাসানচর দেখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহবুব আলম তালুকদার।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে যাচ্ছেন। সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে ভাসানচর যেতে রাজি হবেন শরণার্থীরা। এই দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের কোনো সংস্থার প্রতিনিধি বা গণমাধ্যমর্কীরা থাকছেন না। তবে আগে থেকে ভাসানচরে আরআরআরসি কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছেন।
জাতিসংঘসহ শরণার্থীদের মানবিক সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও কমপক্ষে এক লাখ শরণার্থীকে ওই দ্বীপে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ঢাকাস্থ কার্যালয়ের মুখপাত্র মোস্তফা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এ সর্ম্পকে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের স্বজনেরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না। এখনো আমরা সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক বলেছেন, শনিবার ভোরে ৪০ জন রোহিঙ্গার একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচরের রওনা দিয়েছেন। তারা মঙ্গলবার ফিরবেন। তবে ভাসানচরের বসবাস উপযোগিতা দেখতে রোহিঙ্গা নেতাদের আগস্টের শুরুতে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা শুক্রবার রাতে উখিয়ায় ছিলেন, সেখান থেকে শনিবার ভোরে তাদের সড়কপথে চট্টগ্রাম হয়ে জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।’
শুক্রবার দুপুরে টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থীশিবিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা নেতারা তিন চারদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর সেনা প্রহরায় মাইক্রোবাসে করে উখিয়া রওয়ানা দিয়েছেন। প্রতিনিধিরা উখিয়ায় পৌঁছানোর পর শুক্রবার রাতেই তাদের সঙ্গে দেখা করে আরআরআরসি মাহবুব আলম তালুকদার ভাসানচরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
আগেই সব প্রতিনিধির করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে টেকনাফ জাদিমুরা শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি মো. কালাম বলেন, ‘শুক্রবার রওয়ানা দেবার আগে তাদের সবার সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়েছে। শনিবার ভোরে দুই নারীসহ ৪০ জনের একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া থেকে রওয়ানা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে হয়তো রাতের মধ্যে তারা সেখানে পৌঁছার কথা রয়েছে।
শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৬) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়ার স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।’
টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি মো. নুর বলেন, ভাসানচর যদি বসবাসের উপযুক্ত হয় তবে অবশ্যই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে। আমরা স্বচক্ষে দেখে এলে সবাইকে বোঝাতে পারব। সেই উদ্দেশ্যে সেখানে যাওয়া।
কেমন আছেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা?
বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। জুলাইয়ে ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজার কার্যালয়ের মুখপাত্র লুইস ডোনোভান বলেছিলেন, ওই শরণার্থীদের জন্য সেখানে জাতিসংঘের প্রবেশাধিকার এখন খুবই জরুরি।
ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর মামুন বলেন, ‘এখানে থাকা ৩০৭ রোহিঙ্গা খুবই ভালো আছে। তারা আরাম করে খাচ্ছে-ঘুমাচ্ছে। এখনো তাদের বেসামরিক প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরাই (নৌ বাহিনী) তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছি। ’
এদিকে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই বেসামরিক প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি শুরু হবে বলে জানান নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান।
নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা নেতাদের একটি দল সন্ধ্যায় তার এলাকার ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে। মূলত তারা ভাসানচর থাকার উপযোগী কিনা সেই বিষয়ে পরির্দশনে আসছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।