ভিনদেশি টিউলিপ বাগান, ৮০ লাখ বিনিয়োগে ২০ লাখ টাকা লাভের আশা
জুমবাংলা ডেস্ক: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো রাজসিক সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে ভিনদেশি ফুল টিউলিপ। বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ করে অনেকটাই লাভের আশা করছেন চাষিরা। বাংলানিউজের প্রতিবেদক সোহাগ হায়দার-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
এদিকে প্রান্তিক এমন একটি জনপদে ভিনদেশী ফুলের রাজসিক সৌন্দর্য্য আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের। প্রায় প্রতিদনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলপ্রেমিরা ছুটে আসছেন তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এলাকায়।
জানা গেছে, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ইণ্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট (ইফাদ)’র সহায়তায় ইএসডিও বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুলিয়ার ২০ জন নারী উদ্দোক্তাকে দিয়ে এই টিউলিপ ফুল চাষ করছেন।
নেদারল্যান্ড, কাশ্মীর, সুইজারল্যান্ড বা তুরস্ক নয় বরং বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে এখন এই ফুলের চাষ হচ্ছে। এটি পর্যটন নগরি খ্যাত উপজেলা তেঁতুলিয়ায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারীর মাধ্যমে জানুয়ারিতে ১০ প্রজাতির ১ লাখ টিউলিপ ফুলের বাল্ব রোপণ করা হয়। ইতোমধ্যে ২ একর জমিতে অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট, ডেনমার্ক, লালিবেলাসহ ১০টি ভিন্ন রঙের ফুল ফুটেছে বাগানে। ৫০ টাকা টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা টিউলিপ ফুল দেখতে আসছেন।
গত বছর ছয়টি প্রজাতির ১২ রঙের টিউলিপ চাষ করা হলেও এবার ১০ প্রজাতির ফুল চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলেন, বাহারি ফুল টিউলিপ সাধারণত নেদারল্যান্ডস, কাশ্মীর, তুরস্কের মতো শীতপ্রধান দেশে চাষ হয়। তবে শীতপ্রবণ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও) টিউলিপ চাষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এখন ফুলটি চাষ তেঁতুলিয়ার সম্ভাবনাময় পর্যটনে নতুন সংযোগ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি টিউলিপ চাষের উপযোগী হওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার বাগানের ফলন আরও ভালো হয়েছে।
টিউলিপ কৃষাণী মুক্তা পারভীন ও সুমি আকতার বলেন, এক সময় বাড়ির কাজ শেষে অবসর সময় পার করতাম। কিন্তু এখন এই টিউলিপ ফুল চাষ করে বাড়ির কাজের পাশাপাশি একটা বাড়তি আয় করতে পারছি। এই বাগানের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
ইএসডিও সূত্র জানায়, এবার টিউলিপ চাষ প্রকল্পে এক লাখ ফুলের জন্য বীজ বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, সার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য বাবদ এ পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে টিউলিপ বাগান থেকে ঢাকায় প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রির জন্য পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে স্থানীয়ভাবেও ফুল ও চারা বিক্রি শুরু করা হয়। প্রতিটি স্টিকসহ ফুল এবং চারা ১০০ টাকা করে প্রতিটি বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার টিউলিপ চাষ করে এক কোটি টাকায় বিক্রি এবং প্রায় ২০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কৃষকরা। গত বছর ৩২ লাখ টাকা খরচে ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল বিক্রি করে মাত্র দুই মাসে আট লাখ টাকা আয় করেছিলেন তারা।
কৃষিকে এগিয়ে নিতে ও বাণিজ্যিকরণ করার পাশাপাশি কৃষকদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তেঁতুলিয়াতেই প্রথম বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের বাগান পরিদর্শনসহ বিভিন্ন সহায়তা করছি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা আবহাওয়া এই ফুল চাষের উপযোগী। সেক্ষেত্রে উত্তরের এই উপজেলায় দীর্ঘসময় শীত থাকে। এরকম শীতপ্রবণ এলাকায় টিউলিপ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
ইএসডিওর পরিচালক ড. সেলিমা আখতার জানান, টিউলিপ সল্প মেয়াদি চাষযোগ্য একটি কৃষিপণ্য। এই ফুলের চারা রোপণের ১৮ দিনের মধ্যে কলি বের হয় এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে। সাধারণ ফসলে আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, সেই ক্ষেতেই আমরা টিউলিপ ফুল চাষ করছি। এছাড়া দেশে ফুলের বাজারও প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ফুল বাজারজাত করে কৃষকরা অতি দ্রুত লাভবান হচ্ছেন। এ অঞ্চলের নারীরা টিউলিপ চাষে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
বেকারত্ব গুছাতে ইউটিউব দেখে বিষমুক্ত কুল চাষ, প্রথমবারেরই ১০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।