যুক্তরাজ্যের ভিসা ফি বাড়ছে: শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য বড় দুঃসংবাদ
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য তাদের সব ধরনের ভিসা, স্পনসরশিপ এবং নাগরিকত্ব ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আগামী ৯ এপ্রিল ২০২৫ থেকে এই নতুন ফি কার্যকর হবে। মূলত সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার খরচ মেটানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, পর্যটক এবং বিদেশে চাকরি প্রত্যাশীদের ওপর।
এই পরিবর্তনের ফলে “ভিসা ফি” এখন বাংলাদেশের আবেদনকারীদের জন্য বড় একটি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটন ভিসার নতুন ভিসা ফি ও এর প্রভাব
পর্যটনপ্রেমীদের জন্য যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে। ৯ এপ্রিল থেকে স্বল্পমেয়াদি ভিসা (৬ মাস) নিতে খরচ হবে ১২৭ পাউন্ড, যা প্রায় ১৯,৯৯০ টাকা। বর্তমান ফি ১১৫ পাউন্ড বা ১৮,১০১ টাকা। দীর্ঘমেয়াদি পর্যটন ভিসাগুলোর ফিতেও বড় পরিবর্তন এসেছে:
Table of Contents
-
৬ মাসের বেশি মেয়াদি ভিসা: ৪৭৫ পাউন্ড (৭৪,৭৬৫ টাকা)
-
৫ বছরের ভিসা: ৮৪৮ পাউন্ড (১,৩৩,৬৭৬ টাকা)
-
১০ বছরের ভিসা: ১,০৫৯ পাউন্ড (১,৬৬,৬৬৮ টাকা)
এই ভিসা ফি বৃদ্ধির ফলে অনেকেই তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। বিশেষ করে যারা ফ্যামিলি ভিজিট, চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক ভ্রমণের জন্য আবেদন করেন, তাদের ক্ষেত্রে বাজেট এখন দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থী ও কর্মী ভিসার ফি বৃদ্ধির বিশ্লেষণ
যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর। কিন্তু নতুন ভিসা ফি সেই স্বপ্নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। বর্তমান শিক্ষার্থী ভিসার ফি ৪৯০ পাউন্ড যা ৭৭,১২৬ টাকা। নতুন ফি ৫২৪ পাউন্ড বা ৮২,৪৭৮ টাকা।
কর্মী ভিসা ক্ষেত্রেও পরিবর্তন:
-
৩ বছর মেয়াদি স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা: ৭৬৯ পাউন্ড (১,২১,০৪১ টাকা)
-
৫ বছর মেয়াদি স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা: ১,৫১৯ পাউন্ড (২,৩৯,০৯৩ টাকা)
এছাড়া স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও ফি বাড়ছে, যার ফলে বিদেশি কর্মী নিয়োগও খরচসাপেক্ষ হয়ে উঠবে।
ইটিএ ভিসা ও নতুন ফি কাঠামো
ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) এখন আরও ব্যয়বহুল হচ্ছে। আগে যেখানে এই ফি ছিল মাত্র ১০ পাউন্ড (১,৫৭৪ টাকা), এখন তা হচ্ছে ১৬ পাউন্ড (২,৫১৮ টাকা)।
এই পরিবর্তন মূলত স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণকারীদের জন্য হলেও, তা বড় পরিসরে প্রভাব ফেলবে, কারণ বহু মানুষ ট্যুরিজম ও ব্যবসার কারণে এই ভিসা বেছে নেন।
নাগরিকত্ব ও স্পনসরশিপ আবেদনকারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসছে?
স্পনসরশিপ ফি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হচ্ছে ৫২৫ পাউন্ড (৮২,৬৭৫ টাকা), যেখানে আগে তা ছিল ২৩৯ পাউন্ড (৩৭,৬১৮ টাকা)। এ ছাড়া নাগরিকত্ব লাভের জন্য:
-
বর্তমান ফি: ১,৩৫১ পাউন্ড (২,১২,৬৪৯ টাকা)
-
নতুন ফি: ১,৪৪৫ পাউন্ড (২,২৭,৬০২ টাকা)
এই ভিসা ফি বাড়ানোর ফলে যারা স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে আগ্রহী, তাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে।
কেন বাড়ানো হলো ভিসা ফি?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম, সীমান্ত নজরদারি এবং অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। এই ব্যয় মেটাতে সরকার করদাতাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে ভিসা ফি বৃদ্ধি করেছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ভিসা ফি বৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশের আবেদনকারীদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
নতুন ভিসা ফি বৃদ্ধিতে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?
১. বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থী
২. মধ্যমবিত্ত পর্যটক ও ট্রাভেলার
৩. বিদেশে চাকরি খুঁজছেন এমন পেশাজীবী
৪. আবাসিক নাগরিকত্ব প্রত্যাশী অভিবাসী পরিবার
এদের অনেকেই ভিসা ফি বৃদ্ধির ফলে তাদের আবেদন স্থগিত বা বাতিল করতে বাধ্য হতে পারেন।
কীভাবে এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেবেন?
-
আবেদন সময়মতো জমা দিন: ৯ এপ্রিলের আগেই ভিসা আবেদন করলে পুরোনো ফি কার্যকর থাকবে।
-
আর্থিক প্রস্তুতি নিন: অতিরিক্ত ফি যোগ করে নতুন বাজেট তৈরি করুন।
-
ভিসা কনসালট্যান্টের সহায়তা নিন: পরিবর্তিত নিয়মাবলী বোঝার জন্য প্রফেশনাল সহায়তা নিন।
যুক্তরাজ্যের ভিসা ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, পর্যটক, কর্মী এবং অভিবাসীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের দৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় হলেও, আবেদনকারীদের জন্য এটি বাড়তি আর্থিক চাপের কারণ।
সুতরাং যারা যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী, তাদের এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে এবং ভিসা ফি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।