জুমবাংলা ডেস্ক : লাগামহীনভাবে চলছে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করা, বিধিবহির্ভূতভাবে একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনা, দীর্ঘ সময়েও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, যেনতেনভাবে পাঠদান শেষে সার্টিফিকেট প্রদান ছাড়া আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সম্প্রতি (গত মার্চে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ৩৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য নেই। উপ-উপাচার্য নেই ৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ৩৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোষাধ্যক্ষ (ট্রেজারার)। এমন অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি। সরকার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না লাগামহীন এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে।
ইউজিসি সূত্র বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনিয়ম করতেই শীর্ষ এসব পদ ফাঁকা রাখছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। খেয়ালখুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেই তারা এ অনিয়ম করে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও একাডেমিক কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য (ভিসি)। তিনি সিন্ডিকেট ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
কিন্তু উপাচার্য নেই এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে পিপলস ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শূন্য), ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে), প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি (২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে), প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় (২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে), নর্দান ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া (২০২১ সালের জুন থেকে), ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি (২০২২ সালের জুলাই থেকে), প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা (২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (২০২২ সালের জুলাই থেকে), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি (২০২১ সালের এপ্রিল থেকে), গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর (২০২২ সালের নভেম্বর থেকে), আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি নাটোর (২০২৩ সালের মে থেকে), আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কুমিল্লা, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (২০২০ সালের অক্টোবর থেকে), সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (২০২৩ সালের জুন থেকে)সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করবেন ট্রেজারার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রণয়ন, আর্থিক শৃঙ্খলাও তার দায়িত্ব। কিন্তু ২০০৪ সাল থেকে ট্রেজারার নেই পিপলস ইউনিভার্সিটিতে।
ইউজিসির তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠার পর ট্রেজারার নিয়োগ করা হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, এনপিআই ইউনিভার্সিটিসহ কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের আইন মেনে চলছে। তারা নিয়মিতভাবে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। আর যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সরকারের আইন মেনে চলছে না, যথাযথভাবে কাজ করছে না, সেগুলোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথাযথ শিক্ষার মান বজায় রয়েছে কি না তা নিয়েও ভাবার সময় এসেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা থাকার অনেক কারণ রয়েছে। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১১৬টি। সে হিসেবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের মোট পদ রয়েছে ৩৪৮টি। আর প্রতিটি পদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হয় যোগ্য তিন অধ্যাপকের। সে হিসেবে যোগ্য অধ্যাপক প্রয়োজন ১ হাজার ৪৪ জন। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এর বেশি অধ্যাপক থাকলেও সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না অনেক অধ্যাপক। এ কারণেও ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুত করতে ট্রাস্টি বোর্ডকে পোহাতে হয় ভোগান্তি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি ড. মো. সবুর খান বলেন, বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অধ্যাপক থাকেন, সে হিসেবে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদের জন্য নয়জন অধ্যাপকের প্রস্তাব পাঠাতে সমস্যা হয় না। কিন্তু তুলনামূলক ছোট বা নবীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগের জন্য অধ্যাপক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সরকারকে বিষয়টি অবগত করেছি।
দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি ও ট্রেজারের নিয়োগ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতাও রয়েছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা হয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে যথাযথভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে আমরা সবাইকে এ বিষয়টি সতর্ক করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।