জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের পিয়নের সহায়তায় ঠিকাদার সেজে ওই প্রতিষ্ঠানে নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলে একটি চক্র। এরপর তারা হাতিয়ে নেন প্রতিষ্ঠানটির ৩৪ লাখ টাকা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, একটি কাজ অন্য আরেকজনকে পাওয়ার দিয়ে করাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। কাজ করার পর মূল ঠিকাদারের নামে বিল ওঠে। তখন ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ভুয়া ঠিকাদার মিলে ভুয়া এনআইডিতে একই নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে। এরপর একই নামে খোলা অ্যাকাউন্টে কাজের মূল বিল বাবদ পাওয়া চেক ঢুকিয়ে টাকা তুলে নেয় প্রতারকরা।
এমনভাবে একজন কলেজপড়ুয়া নারী তার স্বামী প্রতারণা করে মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল গায়েব করে দিয়েছেন।
রাজধানীর কোতয়ালী থানায় দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর প্রতারণার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
প্রতারকচক্রের দুই সদস্য হলেন – রমজান হোসেন ও তার স্ত্রী মোসা. দিলারা।
তাদের গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে মামলার বাদী ও ঠিকাদার জসিম উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করে ডিবি।
বুধবার (৬ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক দ্বীন ইসলাম। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি করেন। মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজ সুনামগঞ্জের পিডব্লিওডি’র একটি ঠিকাদারি কাজ নেয়। কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে সাব ঠিকাদার জসিম উদ্দিনকে অথোরাইজেশন দেওয়া হয়।
সাব ঠিকাদার জসিম উদ্দিন কাজটি সম্পূর্ণ করতে রমজান হোসেন ও আবু কাওসারের সঙ্গে ৭ শতাংশ কমিশনে চুক্তিবদ্ধ হন। রমজান হোসেন ও আবু কাওসার ৫/৬ লাখ টাকার কাজ করেন। বাকি কাজ অসম্পূর্ণ রেখে পিডব্লিউডি অফিসে ঘুষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে পালিয়ে যান। কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য পিডব্লিউডি অফিস থেকে চাপ দিতে থাকলে বাধ্য হয়ে জসিম উদ্দিন বাকি কাজ সম্পূর্ণ করেন। রমজান হোসেন ও আবু কাওসার মিলে সে কাজের বিলও আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেন।
এই প্রতারণার পরিকল্পনায় রমজান তার স্ত্রীকে যুক্ত করেন। কাওসারকে নিয়ে রমজান তার বাসায় স্ত্রী মোসা. দিলারাকে নিয়ে বৈঠক করে বলেন, তারা সুনামগঞ্জ পিডব্লিউডিতে ৩৪ লাখ টাকার একটি কাজ করেছে। কিন্তু বিল তুলতে পারছে না। আবু কাওসার মোসা. দিলারাকে বলেন, তিনি যদি টাকাটা তুলতে তাদের সহায়তা করেন তবে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হবে।
আবু কাওসার তাৎক্ষণিকভাবে দিলারাকে দেড় লাখ টাকার চেক দিয়ে বলেন, বিল উত্তোলন হলে তিনি এই চেকে টাকা তুলতে পারবেন। তবে টাকা উত্তোলনের জন্য মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। যার প্রোপাইটার/মালিক হিসেবে দেখানোর জন্য সুমি আক্তার মাহমুদা নামে একটি এনআইডি কার্ড দেন।
এরপর রমজান হোসেন দিলারাকে নিয়ে পূবালী ব্যাংক বাসাবো শাখায় মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেন। চতুরতার সঙ্গে সুমি আক্তার মাহমুদার এনআইডি কার্ডের সঙ্গে দিলারার নিজের ছবি ব্যবহার করে মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটার সুমি আক্তার মাহমুদা নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে তাদেরকে সহায়তা করেন ব্যাংকটির সেই শাখার কর্মকর্তা পলাশ। যার বিনিময়ে রমজান হোসেন পলাশকে ৫০ হাজার টাকা দেন। এরপর তিনজনই সুনামগঞ্জ গিয়ে হোটেলে ওঠেন।
আত্মসাৎ পরিকল্পনায় জড়িত খোদ সাব ঠিকাদার জসিমও-
হারুন অর রশীদ বলেন, সুনামগঞ্জে যাওয়ার পর সাব ঠিকাদার ও আগের বকেয়া কাজ করা জসিম উদ্দিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। রমজান ও কাওসার মিলে সুনামগঞ্জ পিডব্লিউডি অফিসে বিল পাশ করানোর জন্য যান। পিডব্লিউডি অফিসের এসডি আশরাফ হোসেন, এসও এনামুল ও আবুল হাসান ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট লতাকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চারটি চেকের মাধ্যমে বিল পাস করিয়ে নেন।
রমজান হোসেন নিজেকে জসিম পরিচয় দিয়ে পিডব্লিউডি অফিস থেকে চেকগুলো নিয়ে আসেন। চারটি চেকে ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৫ টাকা প্রদান করার জন্য বলা হয়। চেকগুলো নিয়ে তারা পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, দরগা গেট ব্রাঞ্চ, সিলেট শাখায় যান।
যেভাবে ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ-
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, মুখে মাস্ক পরে নিজেকে জসিম উদ্দিন পরিচয় দিয়ে চেকগুলো ক্যাশ করার জন্য ব্যাংকের ভেতরে যান রমজান। ব্যাংক কর্মকর্তা মেসার্স এসএ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার হিসেবে সুমি আক্তার মাহমুদা ওরফে দিলারাকে ফোন দিয়ে জানতে চান, টাকাগুলো ক্যাশ করে দিবেন কি না। তখন দিলারা সম্মতি দেন। এরপরই রমজান ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৫ টাকা উত্তোলন করেন ও ৩০ লাখ টাকা ডাচ বাংলা ব্যাংক সিলেট ব্রাঞ্চ থেকে দিলারার ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ওয়ারী শাখার অ্যাকাউন্টে জমা করেন। বাকি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৫ টাকা রমজান হোসেন নিজের অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন।
তিনি বলেন, প্রতারিত হওয়া ও পুরো বিষয়টি জানার পর সাব ঠিকাদার জসিম উদ্দিন ডিএমপির কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলা হলে পুলিশ রমজান হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। জামিনের কথা বলে বাবা বেলাল হোসেন রমজানের স্ত্রী মোসা. দিলারার কাছ থেকে থেকে ৪ লাখ টাকা নেয়। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে দিলারা নিজের কাছে রাখেন। ডিবি পুলিশ দিলারাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার ও বাকি ২৪ লাখ টাকা ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করে।
পরবর্তীতে মামলার বাদী জসিম উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, এ ধরনের প্রতারণার কারণে মূল ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার মূল ঠিকাদার থেকে পাওয়ার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারাও কখনো কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব ঘটনায় পিডব্লিউডি অফিস ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের প্রেক্ষিতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।