আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন মিশরের নতুন শিক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদেল লতিফ। সম্প্রতি অনলাইন ফ্যাক্ট চেকাররা তার ওই সম্মানসূচক ডিগ্রিকে ‘ভুয়া’ বলে প্রকাশ করার পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। খবর মিডলইস্ট আই-এর।
বুধবার রাজধানী কায়রোর আল-ইত্তিহাদিয়া প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সামনে শপথ নেয় মিসরের নতুন মন্ত্রিসভা। ৩০ মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত নতুন এই মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলি। তিনি ২০১৮ সাল থেকে এ পদে বহাল আছেন।
নতুন এই মন্ত্রিসভায় কিছু মন্ত্রণালয়কে একীভূত করা হয়েছে, কিছু মন্ত্রণালয় রদবদল করা হয়েছে। আবার নতুন কিছু মন্ত্রণালয়ের প্রবর্তন ঘটেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র, অর্থ, শিক্ষা, সরবরাহ, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ ও পর্যটনসহ ২০টি মন্ত্রণালয়ে রদবদল করা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষামন্ত্রী আবদেল লতিফসহ নতুন মন্ত্রী হয়েছেন ২০ জন।
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তার তৃতীয় মেয়াদ (৬ বছর করে) শুরু করার পর, মন্ত্রীসভায় এটাই প্রথম রদবদল ঘটল।
যাইহোক, দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারি মিডিয়া আউটলেট দ্বারা প্রকাশিত এবং ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্যানুযায়ী, নতুন শিক্ষামন্ত্রী আবদেল লতিফ যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডিফ সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি এবং ২০১২ সালে লরেন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা উন্নয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তবে মন্ত্রীর ওই পিএইচডির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিশরীয় সাংবাদিক এবং ফ্যাক্ট-চেকার হোসাম এল-হেন্দি।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করে বলেন, আবদেল লতিফের ডিগ্রিগুলো আসলে ‘ভুয়া’। কারণ কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এই নামে যুক্তরাষ্ট্রে কিছুই নেই। যদি কিছু থেকেও থাকে, তাহলে সেটি ‘ভুয়া’, জাল নথি এবং সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে, যার প্রকৃত কোনো ক্যাম্পাস নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশরিয় এই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত ক্যাম্পাস বা অনুষদবিহীন কোম্পানি, এগুলো অ-স্বীকৃত কাগজপত্র বা সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে।’
এদিকে নতুন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন নেতিবাচক প্রচারের পর, আমর আবদেল সালাম নামে এক আইনজীবী দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটরের কাছে আবদেল লতিফের ডিগ্রি যাচাইয়ের অনুরোধ জানিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী আমর আবদেল সালাম বলেন, আবদেল লতিফ যদি সত্যিই অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি ‘জালিয়াতি’র অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাকে মিশরিয় দণ্ডবিধির ২১১ এবং ২১৩ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে কারাদণ্ড বা সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, লরেন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে কোনো শিক্ষা উন্নয়ন এমএ প্রোগ্রাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে মন্তব্য জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আবদেল লতিফের সর্বশেষ অভিজ্ঞতা হলো প্রাইভেট স্কুল পরিচালনা। তিনি নারমাইন ইসমাইল (NIS) নামে একটি প্রাইভেট স্কুল চেইনের সিইও ছিলেন। যে প্রতিষ্ঠানের মালিক তার মা, ফিল্ড মার্শাল আহমেদ ইসমাইলের মেয়ে।
এদিকে এল-হেন্দির ওই পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট সিসি সরকারের মন্ত্রী নির্বাচনের মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এ নিয়ে আল-মাওকেফ আল-মাসরি নামে সরকারের সমালোচনাকারী একটি অনলাইন সাময়িকি লিখেছে, ‘একজন মন্ত্রীর জন্য পিএইচডি থাকা অবশ্যই প্রয়োজন নয়। কিন্তু যখন একজন মন্ত্রী দাবি করেন যে তার পিএইচডি আছে, যা আসলে একটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেনা একটি অস্বীকৃত ডিগ্রি! তখন একে কেবল তার পদের জন্য অনুপযুক্ত হিসেবেই বর্ণনা করা যেতে পারে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।