হঠাৎ কেন ভূমিকম্প অনুভূত হলো?
২৮ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার দুপুরে এক আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কেঁপে উঠলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং চীন—এই চারটি দেশে একযোগে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্যাংকক ও ইউনান প্রদেশ—কোনো স্থানই রক্ষা পায়নি এই ভয়াবহ কম্পনের কবল থেকে।
এই কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৭.৭, যা পৃথিবীর ভূমিকম্প মাপকাঠিতে “বড় ধরনের” (Major Earthquake) হিসেবে গণ্য হয়। এই নিবন্ধে আমরা খতিয়ে দেখবো—এই ভূমিকম্পের উৎস কোথায় ছিল, কোন কোন অঞ্চলে এর প্রভাব পড়েছে, কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
Table of Contents
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও মাত্রা: কোথা থেকে শুরু?
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার মূল কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের সাগাইং এলাকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, দুপুর ১২:৫০ মিনিটে সাগাইং শহরের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। এই ধরনের অগভীর ভূমিকম্প সাধারণত বেশি তীব্র কম্পন সৃষ্টি করে এবং বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব ফেলে।
➡️ ইউএসজিএস রেকর্ড করেছিল কম্পনের মাত্রা ৭.৭
➡️ CENC (চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক) রিপোর্ট করেছে ৭.৯
➡️ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশে অনুভূত মাত্রা ছিল ৭.৩
এই পার্থক্য মূলত উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ও স্থানীয় কম্পনমাত্রার ভিত্তিতে হয়। তবে সবই একমত—এটি ছিল শক্তিশালী এবং ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা: ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ কম্পন
বাংলাদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। দুপুর ১২:২৫ মিনিটে কয়েক সেকেন্ড ধরে টানা কাঁপুনির ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনজীবনে। অনেকেই ভবন ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন, কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী:
উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চল, ঢাকা থেকে প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৩
সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ধারণ হয়নি, তবে আতঙ্কজনিত অসুস্থতার খবর রয়েছে
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকার মাটির প্রকৃতি এবং ঘনবসতির কারণে এমন কম্পন আরও বেশি বিপজ্জনক হতে পারত। ভাগ্য ভালো যে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতি: ছাদের টুকরো পড়ে, স্তব্ধ রাস্তাঘাট
মিয়ানমার এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তার মাঝেই এমন ভূমিকম্প আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
আল জাজিরা ও AFP সূত্রে জানা গেছে:
নেপিদো ও ইয়াঙ্গুন শহরে ছাদের অংশ পড়ে যায়
রাস্তা ঘাটে জট তৈরি হয় কারণ গাড়িগুলো থেমে যায়
বহু ভবনের ক্ষতি হয়েছে, তবে হতাহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো অজানা
বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে তথ্য পাওয়া কঠিন হচ্ছে, যার কারণে ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
থাইল্যান্ডে প্রতিক্রিয়া: আতঙ্কে ভবন ছাড়লো মানুষ
ব্যাংকক শহরের বাসিন্দারা বলেছেন, ভূমিকম্পের সময় মনে হচ্ছিল যেন ভবন দুলছে। এমনকি পানির পুল থেকেও পানি উপচে পড়তে দেখা গেছে।
ঘটনাগুলো সংক্ষেপে:
চাতুচাক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের নিচে লোক আটকা পড়ে
মেট্রো ও লাইট রেল সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা
থাই প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠক ডাকার কারণে সরকারি সফর স্থগিত
ভূমিকম্পটি পুরো দেশকে আতঙ্কিত করে তোলে এবং সারাদেশে জরুরি বার্তা জারি করা হয়।
চীনে অনুভূতি: ইউনান প্রদেশেও কাঁপুনি
চীনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা CENC জানায়, তাদের হিসাব অনুযায়ী ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৯। ইউনান প্রদেশে কম্পন বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
সিএনসির রিপোর্ট বলছে:
কম্পনের সময়সীমা ছিল ১৫–২০ সেকেন্ড
ইউনান প্রদেশের কিছু ভবন হেলে পড়ে
সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হয় কিছু এলাকায়
চীনেও ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় তারা আগে থেকেই কিছুটা প্রস্তুত ছিল, তবে হঠাৎ এমন কম্পনে আতঙ্ক ছড়ায়।
ভূমিকম্পের সময় কী করণীয়?
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প প্রতিহত করা সম্ভব নয়, তবে সতর্কতা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়:
👉 পাকা দালানের ভিতরে থাকলে মজবুত আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন
👉 উন্মুক্ত স্থানে থাকলে বিদ্যুৎ লাইন ও বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন
👉 আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদে বের হোন, লিফট ব্যবহার করবেন না
👉 জরুরি কিট (ওষুধ, টর্চলাইট, পানি) প্রস্তুত রাখুন
ভূমিকম্প অনুভূত হলেও নিরাপদ থাকা সম্ভব
আজকের ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরপরই আমাদের উচিত ছিল শান্ত থাকা, তথ্য যাচাই করে এগোনো এবং যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া।
সুখবর হলো—এত বড় মাত্রার কম্পন সত্ত্বেও বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু এটি আমাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। এখনই সময় আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।