ভূমিকম্প – একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার সময় ঠিক জানা যায় না, কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে অগণন। এটি শুধুমাত্র একটি ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, বরং মানুষের জীবন, সম্পদ এবং মনস্তত্ত্বের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত করনীয় নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সচেতন করে দেয়—আমরা কতটা প্রস্তুত, কতটা অসচেতন। তাই সময় এসেছে জেনে নেওয়ার যে ভূমিকম্প অনুভব করলে কী করণীয়, এবং আমরা কীভাবে নিজেদের ও প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারি।
ভূমিকম্প অনুভূত করনীয়: জরুরি পদক্ষেপ ও প্রস্তুতির উপায়
যখনই ভূমিকম্প অনুভূত করনীয় অবস্থায় পড়েন, তখন মনে রাখা প্রয়োজন—ভীত হওয়া নয়, বরং সচেতন পদক্ষেপ নেওয়াই জীবন বাঁচাতে পারে। এই অংশে তুলে ধরা হলো জরুরি কিছু দিক, যা ভূমিকম্পের সময় এবং তার পরপরই মেনে চলা উচিত:
Table of Contents
১. নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া
ভূমিকম্প শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে জানালার কাছ থেকে সরে আসুন। কোনো মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে পড়ুন এবং দুই হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় রক্ষা করুন। দেওয়ালের কোণে দাঁড়ানো বা বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া তুলনামূলক নিরাপদ হতে পারে।
২. দরজা বা লিফট ব্যবহার না করা
অনেকেই ভয় পেয়ে তখনই বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন, যা বিপজ্জনক। লিফট ব্যবহার করা একেবারেই বারণ। সিঁড়ি থাকলে ব্যবহার করুন, তবে তাও কম্পন বন্ধ হওয়ার পর।
৩. বাইরে থাকলে খোলা স্থানে দাঁড়ান
যদি আপনি রাস্তায় বা বাইরে থাকেন, তাহলে বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা গাছপালা থেকে দূরে খোলা মাঠ বা পার্কে চলে যান। গাড়ির ভেতরে থাকলে থামিয়ে রাখুন এবং ভেতরেই থাকুন।
৪. মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার
পরিস্থিতি বুঝে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার না করে জরুরি অবস্থার জন্য ফোন সংরক্ষণ করুন। ইন্টারনেট সংযোগ থেকে ভূমিকম্প সম্পর্কিত তথ্য জানা যেতে পারে।
৫. প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত
ঘরে একটি ‘ইমার্জেন্সি ব্যাগ’ থাকা উচিত যেখানে টর্চ, ব্যান্ডেজ, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানি ও শুকনো খাবার থাকবে। ছোটখাটো আঘাতের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা জানা জরুরি।
ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়: নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
ভূমিকম্প শেষে অনেকে ভাবেন ঝুঁকি শেষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সেই সময়টাই আরও সতর্ক থাকার সময়। এই ধাপে কী করণীয় তা জানতে হলে নিচের দিকগুলোতে নজর দিন:
১. বাড়ির গঠন ও ফাটল পরীক্ষা
ভূমিকম্পের পরে বাড়ির দেয়াল, সিলিং, গ্যাস লাইন বা পানির লাইন পরীক্ষা করুন। যদি বড় ফাটল দেখা যায় তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন।
২. প্রাকৃতিক গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করা
ভবিষ্যত বিপদ এড়াতে গ্যাস সংযোগ ও ইলেকট্রিক মেইন বন্ধ করে দিন। গ্যাস লিক হলে তা বিষাক্ত ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
৩. পরিবার ও প্রতিবেশীদের খোঁজ নেওয়া
পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ আছে কিনা যাচাই করুন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করুন এবং একসাথে মিলে সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশের আবহাওয়ার আপডেট নিয়মিত দেখা যেতে পারে।
৪. কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানা
সরকারি রেডিও, টেলিভিশন বা সরকারি ওয়েবসাইট থেকে আপডেট শুনুন। নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। Wikipedia থেকেও জানা যেতে পারে ভূমিকম্পের ধরন ও ইতিহাস।
৫. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি গঠন
বাড়িতে একটি ভূমিকম্প প্রস্তুতি পরিকল্পনা তৈরি করুন, এবং পরিবারের সকলকে নিয়মিত মহড়ায় অংশ নিতে বলুন। বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের বিষয়ে বাড়তি নজর দিন।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো
বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। এর কারণ হলো উপমহাদেশীয় টেকটনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ। অতীতে যেমন ১৮৯৭, ১৯৫০ বা সাম্প্রতিক সময়ের সিলেট অঞ্চলের ভূমিকম্প ছিলো অনেক ভয়াবহ, তেমনি ভবিষ্যতেও হতে পারে শক্তিশালী কম্পন।
জনসচেতনতা জরুরি
স্কুল-কলেজে ভূমিকম্প মহড়া চালু রাখা, মিডিয়ায় সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা, এবং দেশজুড়ে আবহাওয়া বিষয়ে জনগণকে জানানো প্রয়োজন।
নগর পরিকল্পনায় ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা
নতুন ভবন তৈরির সময় সরকারিভাবে ভূমিকম্প সহনশীল ডিজাইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এ নিয়ে আইনের প্রয়োগ ও তদারকি বাড়ানো দরকার।
FAQs: ভূমিকম্প অনুভূত করনীয় নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
১. ভূমিকম্প অনুভব করলে প্রথম কী করব?
প্রথমেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। জানালা বা ভারী জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকুন এবং মাথা ও ঘাড় রক্ষা করুন।
২. ভূমিকম্পের সময় ফোন ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
সরাসরি কল না করে বার্তা পাঠানো ভালো, কারণ ফোন লাইনে চাপ কমবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করুন।
৩. ভূমিকম্পের পর বাড়ি থেকে কখন বের হওয়া উচিত?
কম্পন থেমে গেলে এবং নিশ্চিত হয়ে যে কোনো ভাঙচুর হয়নি, তখনই বের হন। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৪. বাচ্চাদের ভূমিকম্পের সময় কীভাবে রক্ষা করব?
তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান এবং পাশে থাকুন। আগে থেকে মহড়ার মাধ্যমে তাদের প্রস্তুত রাখুন।
৫. জরুরি ব্যাগে কী কী রাখা উচিত?
জরুরি ওষুধ, খাবার, পানি, টর্চ, চার্জার, ফার্স্ট এইড কিট, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র—এসব রাখা দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।