জুমবাংলা ডেস্ক : ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ আর ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যের পর অনেকটা বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। শুধু বাইরে নয় নিজ দলেও তার নেতৃত্ব মানতে চাইছেন না পার্টির সদস্যরা।
এরই মধ্যে দলে তৈরি হয়েছে দুটি ধারা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ তুলছেন পার্টির নেতারা। মতবিরোধের জের ধরে কয়েকজন নেতা দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এরই মধ্যে মেননের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য। এ অবস্থায় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দলটিতে।
আসছে ২ নভেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির চার দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস। এ কংগ্রেস ঘিরে সক্রিয় রয়েছে দুটি পক্ষ।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, একটি ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হতে যাচ্ছে। প্রতি চার বছর পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হিসেবে কংগ্রেস (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। এ কংগ্রেসে সভাপতি হতে চান দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এ নিয়েও শীতল যুদ্ধ চলছে মেনন ও বাদশার মধ্যে। বাদশাপন্থিরা বলছেন, বাদশা সভাপতি হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে পার্টি।
অভিযোগ উঠেছে, দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলীয় গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে সদস্য সংগ্রহ করে কংগ্রেসে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টাও করছেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দলের সর্বশেষ কংগ্রেসে রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ছিল ৪৫০ জন। এখন সেখানে সদস্য করা হয়েছে এক হাজার ১০০ জনকে। রাজশাহীর মতো ঢাকা মহানগরেও গঠনতন্ত্রের ধারা না মেনে আগের ১৫০ জনের পরিবর্তে সদস্য করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। বগুড়ায় আগের ১১৩ জনের সঙ্গে নতুন করে সদস্য করা হয়েছে আরও ৪০ জনকে।
দশম কংগ্রেস সামনে রেখে সারাদেশে কমিটি গঠন হলেও সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এ নিয়ে বগুড়া, মাদারীপুর ও পিরোজপুর জেলার নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া দলে উত্থাপিত ভিন্নমতকে এড়িয়ে যাওয়ারও সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কংগ্রেস সামনে রেখে ভিন্নমত পোষণকারীদের এভাবে কোণঠাসা করতে গেলে দল নিশ্চিত ভাঙনের মুখে পড়বে।
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির ১৪ দলের শরিক হিসেবে থাকা এবং দলীয় প্রতীক ‘হাতুড়ি’ ছেড়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করাটাই তাদের মূল আপত্তির বিষয়। এ ভিন্নমতে দলীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা ও সরকারে অংশ নিয়ে নেতৃত্ব মহলবিশেষের স্বার্থ চরিতার্থ করার মাধ্যমে দল গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। লিখিত অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েও ভিন্নমত তুলে ধরেছেন নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ। বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন ১১ সদস্যের পলিটব্যুরোর আরও দুই সদস্য।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে বিমল বিশ্বাস বলেন, পার্টিতে আদর্শগত বিভাজন হঠাৎ করে হয়নি। আমি সদস্যপদ মৌখিকভাবে প্রত্যাহার করেছি। আজ লিখিত দেব। কারণ, মেননরা যা বলেন, আমরা তা সঠিক মনে করি না। আদর্শবাদী পার্টিতে এভাবে কংগ্রেস হয় না। নেতা-কর্মীদের চাপে বিপদে আছি। তাদের সংগঠিত হতে বলেছি।
জানতে চাইলে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কংগ্রেসে চমক আছে। কংগ্রেস আমাকে সভাপতি কিংবা সাধারণ সদস্য যা-ই করুক, সবকিছু হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।
আর ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, পার্টি এগিয়ে নিতে আমরা ভিন্নমতের দলিল দিয়েছি। পার্টিতে সুবিধাবাদসংক্রান্ত সমস্যা আছে। ক্ষমতা ও ১৪ দলে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক আছে। এসব ইস্যুতে পার্টিতে তুমুল আলোচনা চলছে। আমরা যেহেতু গণতান্ত্রিক-কেন্দ্রিকতায় আস্থা রাখি, তাই কংগ্রেসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।