জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে সয়াবিন তেলের যোগান বেশ কমেছে। ক্রেতাদের অনেকেই চাহিদা অনুয়ায়ী তেল কিনতে পারছেন না। তবে, স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোন ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম সংকট এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট।
রবিবার বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আবদুর রহিম খান আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে অংশ নেন দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
সভায় বর্তমানে বাজারে বোতলজাতকৃত সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে উৎপাদনকারীগণ জানান, পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় তারা সাম্প্রতিক মাসগুলো বাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছেন।
সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি (উপদেষ্টা) অমিতাব চক্রবর্তী জানান, সিটি গ্রুপ জানুয়ারি ২০২৫ এ তারা মোট তেল সরবরাহ করেছেন প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২২,২৪২ হাজার টন বোতলজাতকৃত। অন্যদিকে, ২০২৪ এর একই মাসে বোতলে তারা সরবরাহ করেন ১৪,২৬২ টন।
মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জিএম তসলিম শাহরিয়ার জানান, চলতি জানুয়ারিতে মোট ৪৭,৬৬৮ হাজার টন সরবরাহ করেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার মেট্রিক টন বোতলজাত। পূর্ববর্তী বছরে মোট সরবরাহ ছিল ২৫,০০০ মেট্রিক টনের মধ্যে ১২,০০০ টন বোতলজাত।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ১১, ৮১০ মেট্রিক টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯,৫০০ মেট্রিক টন।
অন্যান্য উৎপাদনকারীরা জানান, তারাও পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ বৃদ্ধি করেছেন। উপস্থিত সবার তথ্যাদি নিয়ে দেখা যায়, জানুয়ারি ২০২৫ মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৫%।
বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙ্গর করার অপেক্ষায় আছে। এগুলো অচিরেই স্থানীয় সরবরাহের সাথে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সাবির্কভাবে, ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে মর্মে জানানো হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুদ করে থাকতে পারে; আবার কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেলে পরিণত করে তা বিক্রয় করতে পারে মর্মে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য অধিক হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ার আশঙ্কার কথাও বলেন।
বিস্তারিত আলোচনা শেষে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়-
১. স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোন ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। কাস্টমস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত দুই মাসে (ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫) ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসাথে, এলসিও বেড়েছে অনুরূপ হারে। অন্যদিকে, বিভিন্ন উপাত্ত থেকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল। সার্বিকভাবে, বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি পরিস্থিতি স্থানীয় বাজারেও এর সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয়। তাই ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন ও বিপনণের সকল পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২. প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকে। উৎপাদক বা অন্যান্য কোন পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩. ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কিনা তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪. ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের স্ব-স্ব নিয়োগকৃত পরিবেশকদের নিকট সরবরাহকৃত ভোজ্যতেল ভোক্তাদের নিকট নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।