জুমবাংলা ডেস্ক : সুস্বাদু, রসালো ও সুন্দর ঘ্রাণের কারণে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। লিচু চাষ করে ভাগ্যবদল করেছেন অনেকে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন চলছে সংগ্রহ ও বিপণনের কাজ। বাগানে বাছাইকৃত ১০০ লিচু ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন চাষিরা। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৯-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম যেন লিচুর রাজ্য। যেদিকে চোখ যায় লিচু আর লিচু গাছ। ঘ্রাণে মাতোয়ারা চারপাশ। গোলাপি, লালচে ও হলুদ রঙের লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছ। হাত বাড়ালেই গাছ থেকে পাড়া যায়। লিচু কিনতে ও বাগান দেখতে প্রতিদিন আসছেন দূর-দূরান্তের লোকজন ও ব্যবসায়ীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ চাষি ও বাগান মালিকদের সঙ্গে দরদাম করে পছন্দের ফলটি কিনছেন। সবমিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। এ অবস্থায় দম ফেলার ফুসরত নেই চাষি, শ্রমিক ও বাগান মালিকদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংগ্রহ ও বিক্রির কাজে ব্যস্ত তারা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবাড়িয়া ও আশপাশের গ্রামে লিচু গাছ আছে প্রায় ১০ হাজার। চলতি মৌসুমে এসব গাছ থেকে ৯-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।
চাষি, শ্রমিক ও বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিচু চাষ করে গ্রামের অনেকের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে। চাষিদের কাছ থেকে বাগান কিনে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। যারাই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, কমবেশি সবাই লাভবান হচ্ছেন। কারণ প্রতি মৌসুমে এখানে ৯-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।
পাঁচ দশক ধরে লিচু বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে জানালেন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের তৌহিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমি এই গ্রামে প্রথম লিচু চাষ শুরু করি। এরপর যতই দিন গড়িয়েছে ততই গ্রামে চাষ বাড়ছে। কারণ একবার চারা রোপণের পর শুধু সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাড়তি কোনও খরচ নেই। তাই এখানকার কৃষকরা লিচু চাষে ঝুঁকছেন।’
চলতি মৌসুমে ফুল ধরার পর বিভিন্ন মালিকের ২৫০টি গাছ আড়াই লাখ টাকায় কিনেছি উল্লেখ করে তৌহিদ মিয়া বলেন, ‘ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, ছয় লাখ টাকায় লিচু বিক্রি করতে পারবো।’
চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আকারে যেমন বড়, তেমনই সুস্বাদু। যে কারণে সারাদেশে বাড়তি চাহিদা ও কদর আছে। তবে মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় বাজারে তেমন একটা পাওয়া যায় না। লোকজন গ্রামে গিয়ে সরাসরি কিনে নিয়ে যান। এবার লিচুর ফলন ভালো হলেও দাম বেশি। বাছাইকৃত ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়।
গ্রামের মোখলেছ মিয়ার ৫০টি গাছ আছে। গাছ থেকে লিচু পেড়ে ১০০টি করে আঁটি বাঁধছেন। তিনি বলেন, ‘একটু ছোট আকারের ১০০ লিচু ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি করছি। তবে বাছাইকৃত বড় আকারের লিচু শ’ ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি করছি।’
নান্দাইল উপজেলা থেকে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে লিচুর বাগান দেখতে এসেছেন তারেক হাসান। তিনি বলেন, ‘একটু বড় আকারের ১০০ লিচু ৮০০ টাকায় কিনেছি। দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানকার লিচুর দাম এমনই। প্রতি বছর বাগান দেখতে এসে পরিবারের জন্য লিচু কিনে নিয়ে যাই।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে লিচু কিনতে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে এসেছেন শামসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে। নারায়ণগঞ্জেও চাহিদা আছে। এই লিচু স্বাদে, রঙে ও ঘ্রাণে অসাধারণ, দামও বেশি। ৭০০-৮০০ টাকা শ’ হিসেবে তিন হাজার পিস লিচু কিনেছি। আশা করছি, ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।’
এ বছর ৯-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে আশা করছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম। তিনি বলেন, ‘গ্রামের নাম অনুসারে সবাই মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বলেই এই ফলকে চেনেন। তবে দাফতরিকভাবে নামকরণ হয়নি। তবে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সুনাম।’
তিনি বলেন, ‘ঠিক কত বছর আগে এবং কীভাবে এখানে লিচু চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে, তা জানা না গেলেও প্রবীণরা বলছেন, অন্তত ২০০ বছর আগে চাষ শুরু হয়। প্রথমে শখ করে হলেও গত কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সাফল্য দেখে পাশের নারান্দি, কুমারপুর ও শ্রীরামদি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে চাষাবাদ।’
চাষিরা বলছেন, সম্ভাবনাময় এই খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা থাকলে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব। পরিকল্পিত চাষাবাদ বদলে দিতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।