মঙ্গল গ্রহে কখনো পানি ছিল কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা আগে নিশ্চিত ছিলেন না। এখন সবাই প্রায় নিশ্চিত যে একসময় সেখানে নদী, হ্রদ, সমুদ্র—সবই ছিল। প্রচুর পানি ছিল। কিন্তু এখন সেখানে ধূসর মরুভূমি। প্রশ্ন হলো, এত পানি কোথায় গেল? কীভাবে উধাও হলো? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯৯ শতাংশ পানি মঙ্গলের শিলাস্তরে মিশে আছে।
লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স কনফারেন্স উপলক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্ল্যানেটরি সায়েন্সের অধ্যাপক এবং প্রকাশিত গবেষণাপত্রের একজন রচয়িতা বেথানি এল এহ্লমান বলেন, পানির অণুগুলো খনিজ পদার্থের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে কাদার মতো পদার্থে পরিণত হয়।
এ ধরনের খনিজ স্তরের ভেতর পানি আটকা পড়ে আছে। অবশ্য প্রথমে সৌরঝড়ে বায়ুকণার আঘাতে কিছু পানির অণু ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণুতে বিভক্ত হয়। কালক্রমে তুলনামূলক হালকা হাইড্রোজেন অণু মহাকাশে বিলীন হয়ে যায়। বিগত দুই দশকে মঙ্গলে পাঠানো রোবট অভিযান, নাসার কিউরিওসিটি রোভার ও মঙ্গল পর্যবেক্ষণকারী অরবিটার এবং সম্প্রতি নাসার প্রেরিত রোবট পারসেভারেন্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে মঙ্গলপৃষ্ঠের ব্যাপক এলাকাজুড়ে এ ধরনের ‘সিক্ত খনিজ’ ছড়িয়ে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের পানি শিলাখণ্ডের নিচে আটকা পড়ে। পানির পরিমাণ কম নয়। এখনো মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে ৬৫ থেকে ১৩০ ফুট গভীর বৈশ্বিক মহাসাগরের সমান পানি জমাট বেঁধে আছে। মঙ্গলে মানুষ বসবাস করতে চাইলে এ পরিমাণ পানি আশার আলো দেখায়।
তবে শুধু মঙ্গলের প্রস্তরখণ্ডের ভেতর আটকে পড়া পানির পরিমাণ খুব বেশি নয়। আর সিক্ত খনিজরূপে বিদ্যমান পানির পরিমাণ বেশি হলেও তা ব্যবহারের উপযোগী করা কঠিন। কারণ, প্রচুর তাপে জ্বাল দিয়ে সেই পানি উদ্ধার করতে হবে। ইলন মাস্ক মঙ্গলে মানুষের বসতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু এ জন্য পানি দরকার।
তাই তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন। ইলন মাস্ক একবার কৌতুকের ছলে বলেছিলেন, মঙ্গলের মেরু অঞ্চলের বরফাচ্ছদন গলিয়ে পানি বের করার জন্য নিউক্লিয়ার বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। কিন্তু এতে যে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না, তা সবাই বোঝে। পৃথিবীতেও কিছু পানি ভূগর্ভস্থ শিলাস্তরের ফাঁকে আটকে আছে। কিন্তু ওগুলো শিলাস্তরের নড়াচড়ায় অগ্ন্যুৎপাতের সময় বাইরে বেরিয়ে আসে। মঙ্গলে আগ্নেয়গিরির যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।