নক নক নক! দরজা খুললেন সায়েরা বানু। দীঘলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করতে নানা ধরনের মজার গণিত শেখান তিনি। সকাল সকাল দরজার সামনে একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে একটু বিরক্ত হলেন। পোশাক ও ঘাড়ের ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে কোনো ইনস্যুরেন্স কর্মী। কথাটা ভাবতেই মেজাজটা আরও খারাপ হলো। আগেও বেশ কবার এরকম ইনস্যুরেন্স কর্মীদের বিদায় করেছেন। হতাশ হয়ে ফিরে গেছে তারা। সায়েরা বানু দরজা খুলে এসব ভাবনাতেই ডুবে ছিলেন। হঠাৎ লোকটা বলে উঠল:
—ম্যাম, কেমন আছেন?
—ভালো। আপনি কে?
—আমি ইনস্যুরেন্স কর্মী। দয়া করে বলবেন, আপনার সন্তান কজন?
সায়েরা বানুর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সরাসরি কর্মীকে বিদায় না করে গণিতের সাহায্যে পরাস্ত করতে চাইলেন। ভাবলেন, কর্মীর সব কথার উত্তর দেবেন গণিতের ভাষায়। পারলে বুঝে নাও!
সায়েরা বানু জবাব দিলেন, তিন জন।
কর্মী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের কার বয়স কত?
সায়েরা বানু বললেন, আমার তিন সন্তানের বয়স গুণ করলে পাবেন ৩৬।
শিক্ষিকা মনে মনে ভাবলেন, এমন উত্তর শুনে কর্মী নিশ্চয়ই চলে যাবে। কারণ, যেকোনো সাধারণ মানুষ এ প্রশ্নের উত্তর থেকেই বুঝবেন যে তিনি সন্তানদের বয়স বলতে চাচ্ছেন না। কিন্তু কর্মী কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে সায়েরা বানুকে অবাক করে জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে আরেকটা ক্লু দিন।
সায়েরা বানু অবাক হলেন। কর্মীর যাওয়ার নাম নেই, আবার সূত্র চাইছে। এদিক-ওদিক মাথা ঘুরিয়ে পাশের বাসার নম্বরটা দেখলেন তিনি। কর্মীর উদ্দেশে বললেন, ‘ওদের বয়স যোগ করলে যে সংখ্যাটা হবে, পাশের বাড়ির নম্বরও তত।’
কর্মী একটু যেন থমকে গেলেন। সায়েরা বানু ভাবলেন, যাক, নিচে নেমে বাড়ির নম্বর দেখতে গেলেই দরজাটা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। কর্মী কিন্তু নড়লেন না। গণিতের শিক্ষিকাকে আরও অবাক করে দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘দয়া করে আমাকে আরেকটা ক্লু দেবেন?’ তারপর একটু থেমে বললেন, ‘আসতে আসতে পাশের বাড়ির নম্বর দেখে এসেছি তো, আমার মনে আছে।’
এবার সায়েরা বানু রেগে গেলেন। রাগটা অবশ্য নিজের ওপর। শুরুতেই কর্মীর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেই হতো। ব্যাটা এখন একের পর এক ক্লু চাইছে। অনেক হয়েছে, আর নয়। তিনি বললেন, ‘আমার হাতে আর সময় নেই। বড় ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডি করতে হবে। আপনি এখন আসুন।’
কর্মী হেসে বললেন, ‘ধন্যবাদ ম্যাম। আমি এখন আপনার তিন সন্তানের বয়স জানি।’
সায়েরা বানু বিস্মিত হলেন। সবার বয়স জানে! ব্যাটা কি গণিতবিদ?
আসলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গণিতবিদ হতে হয় না। একটু বুদ্ধি খাটাতে হয় আরকি। তা ছাড়া কর্মী যে একজন গণিতপ্রেমী, তা তো আমাদের ম্যাম জানতেন না!
যাহোক, তোমরা কি এই প্রশ্নের উত্তর বলতে পারবে? একটু চেষ্টা করে দেখো তো, সমাধান বের করতে পারো কি না। না পারলেও চিন্তা নেই। উত্তর নিচে দেওয়া আছে। তবে নিজে চেষ্টা না করে সমাধান দেখলে কিন্তু হবে না।
সমাধান
প্রথমেই সায়েরা বানু বলেছেন, তাঁর সন্তানদের বয়সের গুণফল ৩৬। এই বয়স অনুসারে তিন সন্তানের সম্ভাব্য বয়স হতে পারে ৮ ধরনের। প্রথমে সেই সম্ভাব্য বয়স দেখে নিই।
১. ৩৬ = ১২ × ৩ × ১
২. ৩৬ = ৬ × ৩ × ২
৩. ৩৬ = ৪ × ৩ × ৩
৪. ৩৬ = ৩৬ × ১ × ১
৫. ৩৬ = ৯ × ৪ × ১
৬. ৩৬ = ১৮ × ২ × ১
৭. ৩৬ = ৯ × ২ × ২
৮. ৩৬ = ৬ × ৬ × ১
অর্থাৎ সায়েরা বানুর সন্তানদের বয়স যথাক্রমে ১২ বছর, ৩ বছর ও ১ বছরও হতে পারে, আবার ৬ বছর, ৩ বছর ও ২ বছরও হতে পারে। আসলে এখানে দেওয়া আটটি অপশনের মধ্যে যেকোনোটা হতে পারে। ফলে এই সূত্র থেকে নির্দিষ্টভাবে বয়স বোঝা সম্ভব নয়। তাই কর্মী দ্বিতীয় ক্লু বা সূত্র জানতে চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় সূত্র ছিল, পাশের বাড়ির নম্বর তাঁর সন্তানদের বয়সের যোগফল। যদি ধরে নিই, তাঁর সন্তানদের বয়স যথাক্রমে ১২, ৩ ও ১ বছর, তাহলে এই তিন সংখ্যার যোগফল হবে ১২ + ৩ + ১ = ১৬ বছর। তাহলে ওপরে যে আটটি সম্ভাব্য বয়স দেওয়া আছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির উৎপাদকের (৩৬-এর উৎপাদক যেমন ১২, ৩ ও ১) যোগফল হলো যথাক্রমে ১৬, ১১, ১০, ৩৮, ১৪, ২১, ১৩ ও ১৩। এই সংখ্যার মধ্যে কোনো একটা সায়েরা বানুর পাশের বাড়ির নম্বর।
১৩ ছাড়া যদি আর কোনো সংখ্যা ওই বাড়ির নম্বর হতো, তাহলে কর্মী সহজে বুঝে নিতেন সন্তানদের কার বয়স কত। যেমন পাশের বাড়ির নম্বর যদি হতো ১১, তাহলে কর্মী ধরে নিতেন সন্তানদের বয়স যথাক্রমে ৬, ৩ ও ২ বছর। কিন্তু কর্মী যেহেতু আরেকটা ক্লু চেয়েছেন, তাই যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্তে আসা যায়, পাশের বাড়ির নম্বর ১৩। কারণ, এই সংখ্যাটাই শুধু ২ বার আছে।
এরপর শিক্ষিকা বললেন, তাঁর আর সময় নেই। কারণ, বড় ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে হবে। আসলে এই কথার মধ্যে একটা ক্লু লুকিয়ে আছে। সেটা জানার আগে দেখে নিই, কোন দুটি উৎপাদকের যোগফল ১৩। ৯ + ২ + ২ = ১৩ এবং ৬ + ৬ + ১ = ১৩। অর্থাৎ, শেষ দুটি উৎপাদকের যোগফল হলো ১৩।
এখানের উৎপাদক দুটি ভালো করে খেয়াল করো। সায়েরা বানু যেহেতু বলেছেন, তাঁর বড় ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে হবে, সেহেতু তাঁর বড় ছেলে একজন। তার মানে, তাঁর সন্তানদের বয়স ৬ বছর, ৬ বছর ও ১ বছর হতে পারে না, কারণ তাহলে বড় ছেলে লাগবে দুই জন। কিন্তু সন্তানদের বয়স যদি যথাক্রমে ১৩ বছর, ২ বছর ও ২ বছর হয়, তাহলে বড় ছেলে একজন হয়। আর এটাই হলো সায়েরা বানুর তিন সন্তানের বয়স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।