আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে প্রতিবেশী ভারতের বিমান হামলার জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মধ্যরাতের পর ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
স্থানীয় সময় রাত ২টা ৪৫ মিনিটে দুইটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
পরে রাত ৩টা ৪২ মিনিটে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিটিভির খবরে তৃতীয় ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খবরে বলা হয়, ‘পাকিস্তান বিমান বাহিনী আওয়ান্তিপোরা থেকে ১৭ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে আরও একটি ভারতীয় রাফাল জেট গুলি করে নামিয়েছে।’
এরপর ভোর ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে বলেন, হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
ভোর ৫টার পর প্রতিরক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, পাকিস্তান আরও দুটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করেছে।
এদিকে, পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)–এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, মধ্যরাতের পর ভারতের ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উপযুক্ত জবাব এরইমধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দিতে শুরু করেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই পাল্টা হামলা হলো।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভি নিউজ জানায়, ‘পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান বিমানবাহিনী দুটি শত্রু বিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের সব যুদ্ধবিমান নিরাপদে রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী শক্ত হাতে শত্রুর মোকাবিলা করছে।’
স্থানীয় সময় রাত ১টা ৬ মিনিটে এআরওয়াই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ভারত বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকার সুবহানুল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদে আকাশপথে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের নয় লক্ষ্যবস্তুতে হামলা ভারতের, ৩ জন নিহতের কথা জানাল পাকিস্তান
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব যুদ্ধবিমান আকাশে সক্রিয় রয়েছে। এই হামলা ভারতের আকাশসীমা থেকেই চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকতে তারা কখনোই পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি—পাকিস্তান সুবিধাজনক সময় ও স্থানে এর কঠোর জবাব দেবে। এই জঘন্য উসকানির কোনো জবাব না দিয়ে আমরা থাকব না।’
সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে এবং পরে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
তিনি বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত হামলার পর ভারত সাময়িকভাবে আনন্দিত হতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী শোক হয়ে ফিরে আসবে।’
পরে জিও নিউজে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক খসড়া তুলে ধরেন।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে—বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট, কোটলি, বাগ, মুজাফফরাবাদ ও মুরিদকে এলাকাগুলো হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল।
তিনি বলেন, ‘আহমেদপুর পূর্বে একটি শিশু শহীদ হয়েছে এবং ১২ জন আহত হয়েছে—এই তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।’ তিনি আরও জানান, কোটলিতে দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ডিজি আইএসপিআর বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছাকাছি একটি বাড়িতে গোলা পড়ে। এক শিশু ও তার বাবা-মা আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধারের কাজ চলছে।’
তিনি আরও জানান, কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মসজিদগুলোতে হামলা আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের বহিঃপ্রকাশ, যা ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।’
তিনি বলেন, মুজাফফরাবাদে একটি ক্ষেপণাস্ত্র রাস্তার ওপর আঘাত হানে। এতে বড় কোনো ক্ষতি না হলেও, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, পাকিস্তানের প্রতিশোধ এখন আকাশে ও স্থলপথে একসঙ্গে চলছে’, বলেন আইএসপিআর প্রধান।
রয়টার্সকে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মধ্যরাতের পর আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ শহরের আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় একাধিক তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তাদের ভাষ্য, বিস্ফোরণের পর শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কিছুক্ষণ আগে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী “অপারেশন সিন্দুর” শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের সেসব সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছে, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই পদক্ষেপগুলো ছিল লক্ষ্যভিত্তিক, সীমিত এবং উত্তেজনা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। লক্ষ্য নির্বাচন ও হামলার পদ্ধতিতে ভারত সংযম দেখিয়েছে।’
গত মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন।
‘ভারতের দাবি যে তারা সন্ত্রাসী শিবিরে হামলা চালিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা’
ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ভারতের পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।