জুমবাংলা ডেস্ক: ‘আমি আসলে এমনই, আমার মন চাইলে আমি নাচি। আমি পড়াশোনা করিনি। ছোটবেলা থেকে একা নাচ শিখেছি। বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানে আমাকে নাচতে বলে। আমি কোনো দ্বিধা করি না। নাচ আমার ভালো লাগে।’ কথাগুলো বলছিলেন কাজল।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীজুড়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। উত্তপ্ত রোদের মাঝে এই বারিধারা যেন শান্তির পরশ হয়ে নামে। বৃষ্টির পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
অবিরত বৃষ্টির মাঝে রাজধানীর সিগন্যালে আটকা থাকা একটি বিআরটিসি লাল বাস, আর সেই বাসের সামনে এক যুবকের ছন্দময় অথচ উন্মাতাল নৃত্য। এই নাচের ভিডিও অনেকেই নিজেদের মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর ছেড়ে দেন ফেসবুকে। ভিডিওটি বিভিন্ন পেইজ- অ্যাকাউন্ট থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ।
কাজল বলেন, ‘সেদিন আসলে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মন চাইল, তাই নেমে পড়লাম নাচতে। আমি তো অনেক ছোটবেলা থেকেই নাচি। নাচতে আমার ভালো লাগে, কে কী মনে করলো তাতে আমার যায় আসে না। কারণ আমি নিজের আয়ে চলি। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা আমার নেই। পড়াশোনাও বেশিদূর করিনি কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি ভালো আছি।’
কাজল একটি খাবারের দোকান চালান। পুরানা পল্টনে কাজলের ‘একে ফুড’ নামে একটি খাবারের দোকান আছে। পাশে আছে একটি লন্ড্রিও। ভাইয়েরা দেশের বাইরে থাকেন। মা থাকেন গ্রামের বাড়ি ময়মন সিংহে। কাজল একাই এক চাচীর বাড়িতে থাকেন। নাচ নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি কখনো। তবে থিয়েটার করেন। নাট্যশালা ও বেইলি রোডে মঞ্চায়িত শিখণ্ডি কথায় অভিনয় করেছেন তিনি।
নাচ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘এখনো তেমন কিছু ভাবিনি। সুযোগ পেলে কে না নিজেকে প্রমাণ করতে চায়? আমি সুযোগ পাইনি। এজন্য আমি পারলেও হয়তো সেটা কারো কাছে তেমন কিছু মনে হয়নি।’
ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে এতো হইচই হলো, কেমন লাগলো? ‘কাজল বলেন, অনেকের প্রশংসা পেয়েছি। শুনে আনন্দিত হয়েছি। ফেসবুকে কমেন্ট পড়েছি। সব কমেন্ট তো পড়তে পারি না। সবাই ভালো বলছে-এই টুকু বুঝতে পারছি।’
কাজল সম্পর্কে তার কাছের মানুষদের বেশ ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গেল। ফাহাদ নামের একজন বলছেন, ‘ও আসলেই আমাদের জেনারেশনের জন্য একটা ইন্সপিরেশন। হয়তো ও লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক না। কিন্তু এখনকার জেনারেশনের অনেক ড্যাম স্মার্ট কুল ডুড দের চেয়ে ভালো। নিজের চেষ্টায় একবারে শুন্য থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত এসেছে।’
ফাহাদ আরো জানালেন, ‘একবার ও অসুস্থ হয়ে গেলো , হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশন করা লাগবে। পুরো এলাকা ওর চিকিৎসার জন্য টাকা উঠাল , জুম্মার মোনাজাতে ওর জন্য দোয়া করা হলো, হাসপাতালে ছোট বড় সবার ভিড়। আল্লাহর রহমতে ও সুস্থ ও হলো।’
নটরডেম কলেজের নাইট স্কুলে কাজল পড়েছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। নাচ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী এই যুবক যে কোনো সুযোগেই নাচতে আগ্রহী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।