বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: মনে মনে তো মানুষ কত কিছুই ভাবে। কিন্তু মনে এক, মুখে এক। সেই মন আর মুখের ব্যবধানেই প্রবেশ চিনা বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের রোবট (Robot) ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কাজ সঠিকভাবে করানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেই সব রোবট। এর মধ্যেই চীনে তৈরি করা হয়েছে এমন এক রোবট, যা মানুষের মনের কথা (Reading Minds) পড়ে ফেলতে সক্ষম। চীনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন তারা এমন এক রোবট তৈরি করে ফেলেছেন, যে হিউম্যান কো-ওয়ার্কারের মনের কথা পড়তে পারে। তাদের দাবি রোবটের এই কাজের অ্যাকুরেসি প্রায় ৯৬ শতাংশ।
চীন থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ইনোভেশন টেকনোলজি সেন্টারের ডেভেলপাররা বর্তমানে জোরকদমে রোবটটি পরীক্ষা করছেন। হংকংভিত্তিক সংবাদপত্র সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। রোবটটি মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে। এবং পেশি থেকে বৈদ্যুতিক সংকেতও সংগ্রহ করে।
ঠিক কী কাজে লাগতে পারে এই রোবট?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন নয়। তবে এই একই প্রযুক্তি আরও বড় মাত্রায় ব্যবহার করতে চান তারা।
গবেষকদের পরিকল্পনা, এই রোবটগুলো শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে কোনও ম্যানুয়াল কাজ, ভারী জিনিস তোলা ইত্যাদির জন্য রোবটের হাত ব্যবহার করা যেতে পারে। মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ে রোবটটি কাজ করতে পারবে, আর সেই কাজ করার জন্য মনে মনে ভেবে নির্দেশ দিলেই চলবে। সেই নির্দেশ দেওয়ার কাজ করবেন কারখানার কর্মীরাই।
তবে প্রাথমিকভাবে খুব নিখুঁত কাজ হচ্ছে না। গবেষকরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত মন দিয়ে কোনও নির্দেশ ভাবা হলে তবেই সেটা করছে রোবটটি। তবে গবেষণা চলবে। আগামী দিনে শিল্পক্ষেত্রে পাইলট হিসাবে ব্যবহারই তাদের মূল লক্ষ্য।
চীনের সেই রোবট ওয়ার্কারদের ব্রেনের ওয়েভ মনিটর করা ছাড়াও ওয়ার্কারদের মাংসপেশি সঞ্চালনের ইলেকট্রিক সিগন্যাল সংগ্রহ করে রাখে। ওয়ার্কারদের কাজের সময় তাদের কাজের গতি, তারা কীভাবে কাজ করছে, তাদের মাথায় কী চলছে ইত্যাদি সব কিছুর বর্ণনা পাওয়ার জন্য এই রোবট তৈরি করা হয়েছে। চীনের থ্রি গর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ইনোভেশন টেকনোলজি সেন্টার সেই রোবট তৈরি করেছে। ওয়ার্কার যখন কাজ করবে তখন তাদের কিছু দরকার হলে আর বলার দরকার পড়বে না। সেই রোবট আগে থেকেই সেটি বুঝে যাবে এবং ওয়ার্কারকে সেই কাজে সাহায্য করবে। এমন অভিনব রোবট তৈরি করার উদ্দেশ্য হলো কাজে আরও গতি নিয়ে আসা। চীনের লক্ষ্য হলো পুরো বিশ্বের রোবটের বাজারে নিজের আধিপত্য বজায় রাখা।
চীনের বিজ্ঞানী এবং সেই রোবট তৈরি করার প্রজেক্টের প্রধান ডং ইউআনফা (Dong Yuanfa) জানিয়েছেন যে, আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানায় অ্যাসেম্বেল করার কাজের জন্য ৪৫ শতাংশ ওয়ার্কলোড থাকে যা টোটাল প্রোডাকশন কস্টের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ কভার করে। এর ফলে এই ধরনের কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই রোবট। অনেকে এই ধরনের রোবটকে কোবোট (Cobot) বলে থাকে।
বিভিন্ন দেশেই রোবট ও মানুষ একসঙ্গে কাজ করলেও রোবটের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করা হয়। কারণ দুর্ঘটনার ঘটার ভয় কিছুটা হলেও থেকে যায়। কিন্তু মানুষ ও রোবট যেন একসঙ্গে সব কাজ করতে পারে তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে এই রোবট। কো-ওয়ার্কারের মনে কী চলছে তা আগে থেকেই পড়ে ফেলতে পারবে সেই রোবট, এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ কম হবে। সম্প্রতি জার্মানির গাড়ির কারখানায় রোবট এবং মানুষ একসঙ্গেই কাজ করছে। এই ধরনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চীন তৈরি করেছে এই অত্যাধুনিক রোবট।
এরকম আরো অনেক রোবট আবিষ্কার করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। যেমন রোবট পুলিশ, রোবট রিপোর্টার, রোবট কুকুর, রোবট টিচার, চাইনিজ আর্মিদের জন্য সামরিক রোবট ট্যাংক এবং মনের কথা বুঝে যাবে এমন রোবট তৈরি করলেন চাইনিজ বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।