আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আগামী বৃহস্পতিবার ভারতে যাচ্ছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। তার সঙ্গে থাকবেন একাধিক মন্ত্রী ও শিল্পপতি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর দিল্লিতে দুই দেশের সপ্তম ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কনসালটেশন (আইজিসি) হবে।
এই বৈঠকে যোগ দিতেই বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে শোলজ আসছেন। শোলজের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, বিশিষ্ট শিল্পপতিও ভারতে আসার কথা রয়েছে।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, আইজিসির বৈঠকের ফলে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো জোরালো হবে।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ভারত ও জার্মানির মধ্যে কৌশলগত অংশীদারি রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমে গভীর হয়েছে। দুই দেশ তাদের এই বিশেষ সম্পর্কের ২৫তম বছরে পা দিচ্ছে। শোলজের এই সফরের ফলে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পথে যাবে দুই দেশ।
কী নিয়ে আলোচনা হবে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সপ্তম আইজিসি বৈঠক যুগ্মভাবে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চেয়ারম্যান শোলজ।
জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা থাকবেন। দুই দেশের মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তারপর সেই আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা প্রধানমন্ত্রী মোদি ও চ্যান্সেলর শোলজকে জানাবেন।
এ ছাড়া দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে তার মধ্যে আছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দুই দেশের প্রতিভাবাবানরা যাতে আরো বেশি সুযোগ পান সেই বিষয়টি, আরো গভীর আর্থিক সম্পর্ক, গ্রিন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি, কৌশলগত প্রযুক্তি।
পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করবেন।
দুই নেতাই ১৮তম এশিয়া প্যাসিফিক কনফারেন্স অব জার্মান বিজনেসে (এপিকে ২০২৪) ভাষণ দেবেন। সেখানে জার্মানি ও ইন্দো-প্যাসিপিক দেশগুলোর শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিনিধি, রাজনীতিক ও প্রশাসকরা উপস্থিত থাকবেন। প্রায় ৬৫০ জন ব্যাবসায়িক নেতা ও সিইও এই ইভেন্টে অংশ নেবেন।
জার্মানির রাষ্ট্রদূত সপ্তাহ দুয়েক আগে জানিয়েছিলেন, সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরি, অভিবাসন, ভূ-রাজনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
ইন্দো-জার্মান চেম্বার অব কমার্সের ডিজি স্তেফান হালুসা জানিয়েছেন, জার্মানির শিল্পপতিদের সামনে মেক ইন ইন্ডিয়ার অংশীদার হওয়ার ও ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেরা সুযোগ এসেছে। তিনি বলেছেন, জার্মানির শিল্পপতিরা চান, ভারত এ ক্ষেত্রে তাদের নিয়ম-বিধি আরো সরল করুক, সব ধরনের পরিকাঠামো আরো উন্নত করার চেষ্টা করুক এবং আরো উদার বাণিজ্যনীতি নিক।
পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ সি রাজামোহন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লিখেছেন, জার্মানি ভারতের শক্তিশালী নিরাপত্তা অংশীদার হতে চায়। শোলজ ও মোদি যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন, তার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
ভারতকে কেন পছন্দ করেন জার্মানির শিল্পপতিরা?
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত কর্মী, রাজনৈতিক স্থিরতা ও কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে জার্মানির শিল্পপতিরা ভারতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করছেন।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মানুষদের ৮২ শতাংশ মনে করছে, আগামী পাঁচ বছরে তাদের টার্নওভার বাড়বে। আর ৭২ শতাংশ মনে করছে, তাদের লাভের পরিমাণ বাড়বে।
জার্মানির সাবমেরিন
এদিকে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য জার্মান সাবমেরিন কেনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চালাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন দুটি দেশের সাবমেরিনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো জার্মানির টিকেএমএস ও অন্যটি স্পেনের নাভানতিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, আইজিসির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছে। শোলজ ভারত থেকে চলে যাওয়ার এক দিন পরই ভারতে যাবেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের বরোদায় যাবেন, টাটা-এয়ারবাস প্রকল্পের উদ্বোধন করতে। তখন স্পেনের সঙ্গেও সাবমেরিন কেনার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।