জুমবাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, মব জাস্টিসের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার, এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত—বিভিন্নভাবে মাজারে হামলা, মন্দিরে হামলা ও আক্রোশের কারণে কোনো ব্যক্তির ওপর হামলা—সব হামলার ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরেন।
এর আগে আজ সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্রসংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সভার বিষয় নিয়েও প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন মাহফুজ আলম। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাঁরা জেনেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনটি সুপারিশ এসেছে। এর মধ্যে একটি হলো, তাঁরা (শিক্ষার্থী) চান না দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি হোক। আরেকটি হলো, শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। আরেকটি হলো, মব জাস্টিস হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এগুলো বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সুপারিশ এসেছে। এই তিন বিষয়ে সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান কী?
জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, কেউ যদি স্বৈরাচার অথবা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অথবা দালাল হিসেবে কাজ করে থাকেন, তাঁদের বিচার জনগণ করবেন না, ‘মব’ তাঁদের বিচার করবে না। তাঁদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। আইন নিজস্ব গতিতে তাঁদের বিচার করবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণ শুধু খেয়াল রাখবেন, যাতে কোনো আপস না হয়, যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যেন বেইমানি না হয়। এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট কঠোরহস্ত। এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাতে আইন অনুযায়ী বিচার করা যায়। কিন্তু জনগণ যেন এ বিষয়ে ‘মব জাস্টিস’–এর আশ্রয় না নেন।
ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দিয়েছিলেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী কোনো কথা বলেননি। বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে যে ধরনের রাজনীতি হয়, সেই রাজনীতি নিয়ে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য তাঁরা (শিক্ষার্থী) সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান এবং অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, তাই এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের সুপারিশের বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, মোটাদাগে দেশের সব ক্যাম্পাসে একধরনের আলোচনা চলছে যে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের শিক্ষক ও ছাত্রলীগের মতো রাজনীতি যাতে ফেরত না আসে। এটি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য, রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশমালা বলা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে সবাই এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ছাত্ররাজনীতি যদি না থাকে, তাহলে কোন পদ্ধতিতে রাজনীতি হবে, তা নিয়ে একধরনের বিতর্ক ও সংলাপ সব জায়গায় চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সপ্তাহে এ নিয়ে আলোচনার আয়োজন হয়েছে। অন্যান্য জায়গাতেও আলোচনা হচ্ছে।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা চাই, সমাজের বিভিন্ন অংশের ভেতরে, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে এই আলোচনাগুলো হোক। এই বিতর্ক ও সংলাপের মধ্য দিয়ে যে ধারণা তৈরি হবে, তার ভিত্তিতে সরকার তার অবস্থান ব্যক্ত করবে।’
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গণহারে নানা ধরনের মামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, এটিও মব জাস্টিসের মতোই ঘটনা। এভাবে ঢালাও মামলা, এক মামলায় অনেককে নিয়ে আসা এবং ব্যক্তিগত কারণে কারও বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া—এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ছাত্র-জনতার ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।