জুমবাংলা ডেস্ক: ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গালাগাও ইউনিয়নে ১৯৯৬ প্রতিষ্ঠিত হয় বহেরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হলেও নির্মিত হয়নি পাকা বা আধাপাকা ভবন। বহেরাকান্দি গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়ে কয়েকদিন আগেও বৃষ্টি হলে বন্ধ থাকত ক্লাস। শ্রেণিকক্ষের ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনায়াসে আনাগোনা করতে পারতে কুকুর বা ছাগল। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ তিনটি কক্ষে ছিল না শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ। ছিল না তেমন শিক্ষা উপকরণ, বেঞ্চ, চেয়ার কিংবা টেবিল। ফলে কমে আসছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও।
এখন জরাজীর্ণ এই চৌচালা ঘরটি মেরামত করা হয়েছে। পুরনো টিনের ছাউনি পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে নতুন টিন। সংস্কার করা হয়েছে শ্রেণীকক্ষের বেড়া। রং করা হয়েছে ভিতর ও বাহিরের অংশে। পরিপাটি পরিবেশে নিশ্চিত করা হয়েছে এর স্যানিটেশন ব্যবস্থায়। ফলে বিদ্যালয়ে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার। নতুন করে পড়াশুনায় উদ্যোমী হয়ে উঠছে ছাত্রছাত্রীরা।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়াম আক্তার বলে, ‘আগে আমাদের স্কুলের টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টি পরত। আমাদের বই ভিজে যেত। ক্লাসে বসার জায়গা তেমন ছিল না। এখন আমাদের স্কুল অনেক ভালো ও সুন্দর হয়েছে। আমরা এখন নিয়মিত স্কুলে আসি। এবং এখন পড়াশুনা ভালো হয়। এখন আমাদের বই আর ভিজে না।’
স্থানীয় জুয়েল মিয়ার মেয়ে পড়াশোনা করে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল না। শুনেছি ইউএনও মহোদয়ের চেষ্টায় স্কুল উন্নত হয়েছে। আগে বাচ্চারা ক্লাসে যেতে চাইত না। পরিবেশ ভালো হওয়ায় এখন তারা স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ার আমাদেরও ভালো লাগছে।’
বদলে যাওয়ার এই চিত্র শুধু বহেরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। বর্ষায় কাদামাটিতে একাকার হয়ে স্কুলে যাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে উপজেলার, গোয়াতলা, চান্দপুর ও মাঝিয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছেন। কাগচর মনোরঞ্জন ভৌমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংযোগ সডকটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে গাইডওয়াল নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ ও নিয়মিত পরিদর্শনে বদলে গেছে প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ।
আর এই বদলে যাওয়ার পেছনে এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে কাজ করছেন তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমত। সবার চেষ্টায় বদলে গেছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। এরই মধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি রোধ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার। স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে খেলার মাঠ সংস্কার, টিফিনবক্স বিতরণ করা হয়েছে। স্কুলের আঙিনায় সবজি বাগান তৈরি, স্কুলের বারান্দা ও শ্রেণিকক্ষের পাশে টবে ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে।
তারাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন আরা বেগম বলেন, তারাকান্দার ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২ লাখ ৭০ হাজার ১৯ জন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় ইতোমধ্যে প্রায় সবকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। এ সকল কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ের পরে ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার অনেকটা কমে গিয়েছিল। এখন উপস্থিতির হার শতকরা ৮০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। সবাই অব্যাহত কার্যক্রমে আশা করা যায়, শতভাগ সাফল্য আসবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমত বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয় শিক্ষার আতুড়ঘর। এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধারক ও বাহক। তাই এই শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের গড়ে তুলতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।