মুফতি জাকারিয়া হারুন : মানুষের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। ইসলামে মৃত্যুর পরও মানুষের মর্যাদার খেয়াল রাখা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে উত্তমভাবে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে তার জন্য দোয়া করে দাফনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটা জীবিত মুসলমানদের ওপর মৃতদের অধিকার।
কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া। মুসলমান সমাজের আবশ্যকীয় কর্তব্য, অর্থাৎ কয়েকজন জানাজা পড়লে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, কেউ না পড়লে সবাই গুনাহগার হবে।
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অনেক মানুষের পূর্ণাঙ্গ মরদেহ পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় তার জানাজার নামাজ পড়া হবে কিনা? এর উত্তর হচ্ছে: এ রকম ক্ষেত্রে মরদেহের মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া গেলে, অথবা মাথা ছাড়া অর্ধেকের বেশি পাওয়া গেলে তা পূর্ণ মরদেহ গণ্য হবে। এ রকম মরদেহের গোসল ও জানাজা সবকিছুই সাধারণ নিয়মে করতে হবে।
তবে মৃত ব্যক্তির শুধু মাথা বা হাত ও পা কিংবা কর্তিত অল্প অংশ পাওয়া গেলে এর গোসল-জানাজা দিতে হয় না। এ রকম কর্তিত অংশ পবিত্র কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করতে হয়। এটা হানাফি মাজহাবের অভিমত। (ফতহুল কাদির)
তবে ইমাম শাফেঈ (রহ.) ও ইমাম আহমদের (রহ.) মতে, যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত, তার মরদেহের সামান্য অংশ পাওয়া গেলেও ওই অংশটুকুকে যথা নিয়মে গোসল দিতে হবে এবং জানাজাও পড়তে হবে। যদি ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া না যায় এবং ওই অংশটি জীবিত অবস্থায় তার শরীর থেকে কর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জানাজা পড়া যাবে না। (নববি ফিল-মাজমু)
জানাজা আদায়ের সওয়াব
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক কিরাত পরিমাণ নেকি লাভ করে, আর যে ব্যক্তি জানাজা শেষে দাফনের কাজে অংশ নেয়, সে দুই কিরাত পরিমাণ সওয়াব লাভ করে। এক সাহাবি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসুল! দুই কিরাত কী? নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দুই কিরাতের ক্ষুদ্রতম কিরাত ওহুদ পাহাড়ের সমান। (ইবনে কাছির)
জানাজার নামাজ মৃতের অধিকার
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছটি অধিকার রয়েছে — এক. যখন কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয়, তখন সালাম দেবে; দুই. কোনো মুসলমান ডাকলে সাড়া দেবে; তিন. সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে; চার. কোনো মুসলমানের হাঁচি এলে হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে; পাঁচ. কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে; এবং ছয়. কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।’ (মুসলিম: ২১৬২)
জানাজার নামাজের নিয়ম
মনে মনে নিয়ত করবেন: ‘আমি জানাজার ফরজে কেফায়া নামাজ চার তাকবিরসহ এ ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আদায়ের নিয়ত করছি।’ এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবর) বলতে হবে। প্রথম তাকবিরের পর সানা, দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়া, তারপর তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়বেন। এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
সংক্ষেপে জানাজার নামাজের নিয়ম হলো মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে তাঁকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য সবাই একত্র হয়ে দাঁড়াবেন। চারবার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.