জুমবাংলা ডেস্ক : মানুষের ক্ষতি করে মশাসহ এমন পোকামাড়ক মারার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছয় শতাধিক লাইসেন্স ছিল, যারা বিভিন্ন ধরনের মশার কয়েল, অ্যারোসোল, তরল ওষুধ, ক্রিম উৎপাদন করছে। এর মধ্যে শুধু মশার জন্যই কয়েলের লাইসেন্স ছিল ২২৯টি। তবে নতুন করে সম্প্রতি মশার কয়েল উৎপাদনের জন্য আরও ৩৩০টি লাইসেন্স দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফলে এখন দেশে অনুমোদিত মশার কয়েলের লাইসেন্স ৫৫৯টি।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে গঠিত বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) ৮৬তম সভায় এত সংখ্যক লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিধিমালা অনুযায়ী কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পিটাকের সভাপতি। মাঠ পর্যায়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেই এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এডিস মশায় আক্রান্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। মশা বিতাড়িত করতে মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে মশার কয়েল। এ কারণে মশার কয়েলের চাহিদা বেড়েই চলছে। সম্প্রতি বিশ্ব মশা দিবস উপলক্ষে ‘মশাদের আক্রমণ, রুখতে হই সচেতন’ ক্যাম্পেইন শুরু করে মশার কয়েল উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কয়েলের বিক্রি আরও বৃদ্ধি। এছাড়া বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা বলেছেন, আগের চেয়ে কয়েল বিক্রির পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।
মশার কয়েলের মূল উপাদান কোন দেশ থেকে কী পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে এবং কোন কোন উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জানানোর নির্দেশনা আছে। কিন্তু মশার কয়েল উৎপাদনকারী সে তথ্য কৃষি বিভাগকে দিচ্ছে না। ফলে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য কৃষি বিভাগের নেই। নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ডেমরা, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লায় মশার কয়েলের কারখানা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন) ড. রফিকুল আলম খান বলেন, মশার কয়েল উৎপাদনের জন্য সাত ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এই উপকরণ বিশেষ করে রাসায়নিক উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করছে কি না, কী পরিমাণ করছে, কী কী উপকরণ ব্যবহার করছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তা জানান, মশার কয়েলের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারি তিনটি সংস্থা জড়িত—বিএসটিআই, আইইডিসিআর ও এন্টোমোলজি বিভাগ।
গত বছর গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএসটিআই বৈধ মশার কয়েলের লাইসেন্সধারীদের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে ২২৯টি মশার কয়েলের নাম, ঠিকানা ও ব্র্যান্ডের নাম প্রকাশ করে। ঐ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এই পণ্য উৎপাদন, বিক্রয়-বিতরণের আগে বিএসটিআই-এর লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কিছু অসাধু উৎপাদনকারী বিএসটিআই-এর সিএম লাইসেন্স গ্রহণ না করে নকল ও নিম্নমানের মশার কয়েল উত্পাদনপূর্বক পণ্যের লেবেলে বা মোড়কে অবৈধভাবে বিএসটিআই-এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে বিক্রি-বিতরণ ও বাজারজাত করছে। এতে একদিকে জনগণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে, অন্যদিকে ক্রেতাসাধারণ নিম্নমানের পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছেন। নকল ও নিম্নমানের মশার কয়েল উৎপাদনকারী এবং অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিএসটিআই-এর মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স অভিযান অব্যাহত আছে।
কয়েল ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে মশার কয়েল, স্প্রে মতো পণ্যের বাজার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মশার কয়েল। যা ৯৫ শতাংশ। বাংলাদেশ মসকিউটো কয়েল ম্যানুফাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে ১ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান কয়েল উৎপাদন করে। যারা অবৈধভাবে কয়েল উৎপাদন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরাও বিএসটিআইকে অনুরোধ করেছি।
যে পরিমাণ অবৈধভাবে মশার কয়েল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে, সে তুলনায় অভিযান খুবই কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনার জন্য জনবল হাতে গোনা। মাত্র তিন জন সব ধরনের পেস্টিসাইডের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে আছেন। বিএসটিআই-এর পক্ষ থেকেই খুবই কম সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।