জুমবাংলা ডেস্ক: মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে মানুষ কত কিছুই না করে! ‘মশা মারতে কামান দাগানো’ কথাটি তো আর এমনি আসেনি। এখন মশা খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যাই হোক, মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে মশা খেয়ে ফেলা নতুন ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, মানুষ মশা খাচ্ছে। মশা দিয়ে কেক, স্যুপ বানিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছে!
অদ্ভুত এই ঘটনা আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া এবং এর আশপাশের এলাকায় ঘটতে দেখা যায়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া গ্রেট লেক অঞ্চলে উড়তে থাকে লাখ লাখ মশা। মশার ভিড়ে কালো হয়ে আসে আকাশ। অনেক সময় মশার কারণে দূরের অনেক কিছু দেখা পর্যন্ত যায় না। তবে এ জন্য বিরক্ত হন না সেখানকার বাসিন্দারা। বরং মশার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে তাদের খুশিও বাড়তে থাকে। কারণ তাদের কাছে মশা হলো মাংস খাওয়ার প্রধান মাধ্যম!
আফ্রিকার এই অঞ্চলে খুবই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। এখনও অনেক লোক আছে যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার বা বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন না। কিন্তু তারা এর বিকল্প খুঁজে নেন মশার কেক বা স্যুপ থেকে। এটি স্থানীয় খাবার যা মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মশা দিয়ে তৈরি কেকে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, এমনকি গরুর মাংসের চেয়েও।
আফ্রিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির লেক হলো ভিক্টোরিয়া লেক। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীরা লেকটি আবিষ্কার করেন। বিশাল লেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কয়েক শ’ মিলিয়ন মশা জন্ম নেয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে লেক ভিক্টোরিয়ার আশপাশের গ্রামগুলোতে শুরু হয় মশা ধরার উৎসব। ছোট বড় সবাই এই উৎসবে যোগ দেয়। হাতে খালি হাঁড়ি নিয়ে তারা মশা সংগ্রহ করে। উড়তে থাকা মশার দলে একবার হাঁড়ি শূন্যে ঘোরালেই হাঁড়িতে জমা হয় মশার স্তূপ। সেই মশা থেকেই তৈরি হয় কেক।
কেক তৈরির জন্য প্রথমে সংগ্রহ করা মশা হাতে ডলে মন্ড করতে হয়। যা দেখতে অনেকটা ভর্তার মতো। সেই মন্ড ভাগ করে মাংসের চাপের (প্যাটি) মতো বানানো হয়। এরপর সেগুলো ভাজা হয়। পাতলা প্যানে তেল দিয়ে উল্টে-পাল্টে দুই পাশেই ভেজে নেয়া হয়। এ সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মশার চাপের ঘ্রাণ। ভিতরের অংশ কাঁচা থাকলেও যদি বাইরের অংশে কালো হয়ে যায় তাহলেও সমস্যা নেই।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এ ভাবে তৈরি মশার কেক খেতে অনেকটা মাছের বড়ার মতো। তাদের বিশ্বাস মশাগুলো ভিক্টোরিয়া লেকের আশপাশে থাকে বিধায় তাদের মাংস থেকে সামুদ্রিক খাদ্যের স্বাদ পাওয়া যায়। এ কারণে তাদের ধারণা মশার কেক তাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। এই খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ সাধারণ গরুর মাংস এবং মাটনের ৭ গুণ বেশি।
পেই ইয়ে নাম এক বাসিন্দা গণমাধ্যমে বলেন, পোকামাকড়ের প্রোটিন মাংসের চেয়ে কম নয়। তাই বন্য অঞ্চলে পোকামাকড়ই প্রোটিনের উৎস। এটা ঠিক যে আমরা খুব গরিব। তবে প্রায় ৫ লাখ মশা দিয়ে মাংসের একটি প্যাটি তৈরি করা যায়। শুধু তাই নয়, অনেকে মশার স্যুপও তৈরি করেন। স্যুপের রেসিপি সাধারণ স্যুপের মতোই। তবে তাতে ভাসতে থাকে অসংখ্য মশার দেহাবশেষ। এই স্যুপ খেতে সন্তানদের বেশ উৎসাহ দেন ওই অঞ্চলের বাবা-মায়েরা। তাদের ধারণা এই স্যুপ পান করলে সন্তানদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের মানুষের খাবার টেবিলে মশার নানা পদের জুড়ি নেই।
কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মশা খাওয়া নিরাপদ নয়। মশা শরীরে বিপুলসংখ্যক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বহন করে এবং জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায়। উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হলেও সব জীবাণু মেরে ফেলা কঠিন। কিন্তু আফ্রিকার দরিদ্র মানুষদের কাছে এটা বড় কোনো বিষয় নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।