জানি না, কখনও এমন প্রশ্ন আপনার মাথায় এসেছে কিনা—মহাকর্ষ না থাকলে কী হতো? প্রশ্নটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে কল্পনার দুনিয়া খুলে যায়, কিন্তু এর উত্তর শুধু কল্পনায় সীমাবদ্ধ নয়। আধুনিক বিজ্ঞান এই প্রশ্নের নিরপেক্ষ ও বিশ্লেষণধর্মী উত্তর দিয়েছে।
মহাকর্ষ না থাকলে কী হতো: বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
মহাকর্ষ একটি মৌলিক বল, যা আমাদের চারপাশের জগতের কাঠামো নির্ধারণ করে। এটি শুধু আমাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে না, বরং সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহের গতিপথ থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের গঠনের পেছনেও কাজ করে। যদি মহাকর্ষ হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যেত, তাহলে পৃথিবীর সকল কিছুই এক সেকেন্ডের মধ্যে বিশৃঙ্খলায় পরিণত হতো।
Table of Contents
এই বলটাই আমাদের সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে সাহায্য করে। মহাকর্ষ ছাড়া সূর্য ও পৃথিবীর বন্ধন থাকত না, ফলে পৃথিবী ছুটে যেত মহাশূন্যের এক অজানা গন্তব্যে। এর ফলে তাপমাত্রা মুহূর্তেই হিমশীতল হতো এবং প্রাণধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ত।
মানবদেহের ক্ষেত্রেও মহাকর্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন মহাকর্ষহীন পরিবেশে অবস্থান করলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, পেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, এমনকি চোখের উপরেও প্রভাব পড়ে। এই তথ্যগুলো আমরা পেয়েছি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের কাছ থেকে।
প্রতিদিনের জীবনে মহাকর্ষের অবদান
আপনি যখন একটি বল ছুঁড়ে দেন, সেটি মাটিতে পড়ে—এটাই মহাকর্ষের কাজ। গাছের ফল পড়ে, নদীর পানি নিচের দিকে বয়ে যায়, এমনকি আমাদের রক্তপ্রবাহের একটি দিকনির্দেশিত ধরণ আছে—সবই মহাকর্ষের কারণে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকর্ষ না থাকলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলই টিকে থাকত না। ফলে আমরা শ্বাস নিতে পারতাম না। এর ফলে উদ্ভিদ, প্রাণী, এমনকি ব্যাকটেরিয়াও অস্তিত্ব হারাত। অর্থাৎ, জীবন নামক বস্তুটির অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মহাকর্ষ ছাড়া মহাকাশে টেলিস্কোপের অবস্থান স্থির রাখা যেত না, কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানো অসম্ভব হতো। মোবাইল সিগনাল থেকে শুরু করে ইন্টারনেট পর্যন্ত—সবই থমকে যেত।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কাঠামো ও মহাকর্ষ
গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র গঠনে ভূমিকা
মহাকর্ষ ছাড়া গ্যালাক্সির মতো বিশাল কাঠামো গঠিত হতো না। নক্ষত্র, গ্রহ, ধূলিকণা—সবই মহাকর্ষের টানে একত্র হয়ে আজকের মহাবিশ্ব তৈরি করেছে। এটি ছাড়া সব কিছুই ছড়িয়ে পড়ত এবং ব্রহ্মাণ্ড অনন্ত শূন্যতায় হারিয়ে যেত।
মহাকর্ষ তরঙ্গের আবিষ্কার
২০১৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মহাকর্ষ তরঙ্গ (gravitational waves) শনাক্ত করেন, যা দুটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে, মহাকর্ষ শুধু একটি বল নয়, এটি স্থান-কালের গঠনকেও প্রভাবিত করে।
তথ্যসূত্র: NASA.gov
জেনে রাখুন-
- মহাকর্ষ ছাড়া পৃথিবী কোথায় যেত?
পৃথিবী সরলরেখায় চলে যেত অজানা মহাকাশে, কারণ সূর্যের কক্ষপথে থাকা সম্ভব হতো না। - মানুষ মহাকর্ষ ছাড়া বাঁচতে পারবে কি?
না, দীর্ঘমেয়াদে মহাকর্ষ ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব কারণ আমাদের দেহ এই পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়। - মহাকর্ষ কি একমাত্র বল?
না, কিন্তু এটি সবচেয়ে দুর্বল বল হলেও সর্বব্যাপী এবং স্থায়িত্বশীল বল হিসেবে কাজ করে। - মহাকর্ষ ছাড়া জীবন কেমন হতো?
জীবন টিকে থাকত না, কারণ জৈবিক ও ভৌত প্রক্রিয়াগুলো মহাকর্ষের উপর নির্ভরশীল। - গ্র্যাভিটি ট্রেন কী?
এটি একটি কাল্পনিক ধারণা, যেখানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ট্রেন চলবে কেবল মহাকর্ষের সাহায্যে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।