
সাহারা মরুভূমির সাদা-হলুদ বিস্তারের মাঝে হঠাৎই চোখে পড়ে কালো, বৃত্তকার পাথুরে পাহাড়। লিবিয়ার দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে থাকা এই জাবাল আরকানুর নতুন ছবি তুলেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস), যেখানে আরও স্পষ্ট হয়েছে এর ভূতাত্ত্বিক রহস্য।
আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির অন্যতম শুষ্ক অঞ্চলে হঠাৎই দেখা মেলে কালো পাথুরে পাহাড়ি গঠনসমূহের। তাদের মাঝেই রয়েছে আকর্ষণীয় ও রহস্যময় পাহাড়ি বলয় জাবাল আরকানু, যার গোলাকার বৃত্ত-সদৃশ বিন্যাস পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে অত্যন্ত বিরল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে তোলা সর্বশেষ ছবিতে জাবাল আরকানুর রিং-স্ট্রাকচার আরও পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।
লিবিয়ার দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে, মিশর সীমান্তের কাছে অবস্থিত জাবাল আরকানুর আশপাশেও রয়েছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পাহাড়ি গঠন। এর দক্ষিণ–পূর্ব দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে জাবাল আল-আওয়াইনাত, আর পশ্চিমে ৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরকানু ফরমেশনস।
দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন—এই বৃত্তাকার গঠনগুলো উল্কাপাতের আঘাতে সৃষ্টি। তবে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে। নতুন বিশ্লেষণ জানায়, বৃত্ত-সদৃশ এই বিশাল বলয়গুলো আসলে ভূগর্ভস্থ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল। বিজ্ঞানীদের মতে, ভূগর্ভে থাকা গলিত শিলা বা ম্যাগমা আশপাশের কঠিন স্তরের মধ্যে বারবার প্রবেশ করে, দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করেছে রিং-আকৃতির এসব পাহাড়ি কাঠামো। ভূবিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের গঠনকে বলা হয় রিং কমপ্লেক্স।
সাহারার নির্জনতার মাঝে বিরল এই রিং কমপ্লেক্স বিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিক মহলে কৌতূহলের জোয়ার তুলেছে, আর আইএসএসের তোলা নতুন ছবি যেন সেই রহস্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এর গঠন মূলত আগ্নেয় শিলা যেমন ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট দিয়ে তৈরি। পাহাড়ের উত্তরে আবার রয়েছে টুপি-সদৃশ স্তর যা বালুকাপাথর, চুনাপাথর ও কোয়ার্টজ দিয়ে গঠিত।
২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তোলা আইএসএসের ছবিতে দেখা যায়, পাহাড়ের লম্বা ছায়া মরুভূমির ওপর ছড়িয়ে আছে। জাবাল আরকানু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৪০০ মিটার উঁচু। আশপাশের সমতল মরুভূমির চেয়ে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে এটি। পাহাড়ের পাদদেশে বড় বড় পাথর, নুড়ি এবং বাতাসে উড়ে যাওয়া বালুর পাখনা-সদৃশ রেখা ছড়িয়ে রয়েছে। এর ভেতরে দু’টি শুকনো নদীখাত (ওয়াদি)ও দেখা যায়।
এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম বার্ষিক মাত্র ১–৫ মিলিমিটার। জাবাল আরকানুর আশপাশে কিছুটা বেশি, প্রায় ৫–১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয়, পাহাড়ের কারণে সামান্য ‘ওরোগ্রাফিক ইফেক্ট’ (পাহাড়ের কারণে বৃষ্টির সামান্য বৃদ্ধি) তৈরি হয়।
ছবিটি আইএসএস এক্সপেডিশন–৭৩-এর একজন মহাকাশচারী নিকন Z9 ক্যামেরা ও ৮০০ মিমি লেন্সে তোলেন। পরবর্তীতে কনট্রাস্ট ও স্বচ্ছতা বাড়াতে সামান্য সম্পাদনা করা হয়। এই প্রকল্পে আইএসএস ক্রু আর্থ অবজারভেশনস ফ্যাসিলিটি এবং নাসার আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে, যাতে মহাকাশ থেকে তোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূ-পৃষ্ঠের ছবি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



