মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে একটি ‘কৃত্রিম নক্ষত্র’ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। গবেষণার প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। ২০২৯ সালে এ নক্ষত্র মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন এই কৃত্রিম নক্ষত্র আসলে একটি স্যাটেলাইট। আকার অনেকটা জুতার বাক্সের মতো। এটি থাকবে পৃথিবীর কক্ষপথে। ঘুরবেও প্রায় পৃথিবীর সমান গতিতে। ফলে আকাশে এই নক্ষত্র বা স্যাটেলাইটকে মনে হবে স্থির।
কিন্তু তাই বলে পৃথিবী থেকে একে খালি চোখে দেখা যাবে না। কারণ মানুষ খালি চোখে যতটা দেখতে পারে, এই নক্ষত্র হবে তারচেয়ে ১০০ ভাগ অস্পষ্ট। অবশ্য টেলিস্কোপে চোখ রেখে এর দেখা মিলবে। এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ল্যান্ডোল্ট নাসা স্পেস মিশন।
এ মিশনের নামকরণ করা হয়েছে মার্কিন জ্যোতির্বিদ আর্লো উডেল ল্যান্ডোল্টের নামে। এই জ্যোতির্বিদ নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা নিয়ে বিস্তৃত একটি ক্যাটালগ তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। এই মিশনের উদ্দেশ্যও সেটাই—রাতের আকাশে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা। সে জন্যই এ মিশনের নাম রাখা হয়েছে ওই বিজ্ঞানীর নামে।
স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর পৃথিবী থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৫ কিলোমিটার ওপরে জিওসিনক্রোনাস কক্ষপথে অবস্থান করবে। সেখানে পৌঁছানোর পর স্যাটেলাইটে থাকা ৮টি লেজার লাইট জ্বলে উঠবে। নক্ষত্র যেভাবে জ্বলে, ঠিক একইভাবে এই কৃত্রিম নক্ষত্রের আলো দেখা যাবে।
আর সেই আলো দেখে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করবেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে নক্ষত্রের আলোর কতটা পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কোনো আলো শুষে নেয় কি না, নিলে কতটা শুষে নেয়, তাও পরীক্ষা করা হবে এই মিশনে।
তবে বিজ্ঞানীরা শুধু এই নক্ষত্রের আলো নিয়েই গবেষণা করবেন না। সত্যিকার ৬০টি নক্ষত্রের আলোর সঙ্গে এই কৃত্রিম নক্ষত্রের আলোর তুলনামূলক পরীক্ষা করবেন তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং এই মিশনের প্রধান পরিকল্পনাকারী পিটার প্লাভচান জানিয়েছেন, ‘এ মিশনে মোট ৩০ জনের একটা দল কাজ করবে। মিশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।’
বর্তমানে নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানো নিয়ে বিজ্ঞানীদের যে অনুমান রয়েছে, এই পদ্ধতির সাহায্যে তা আরও ১০ গুণ নির্ভুল হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম এ নক্ষত্রের ওপর দৃষ্টি রাখবে পৃথিবীতে থাকা সেরা চারটি টেলিস্কোপ।
এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২.৬ ফুটের একটি টেলিস্কোপ, হাওয়াইয়ের মাওনা কিয়া অবজারভেটরির ইউএইচ ৮৮ টেলিস্কোপ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার অবজারভেটরির হেল টেলিস্কোপ ও অতি শিগগিরই চালু হতে যাওয়া ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরি।
গবেষকদের বিশ্বাস, এই কৃত্রিম নক্ষত্রের সাহায্যে তারার উজ্জ্বলতা ও দূরত্ব আরও সঠিকভাবে পরিমাপ করা যাবে। হয়তো কোনো ভিনগ্রহের নক্ষত্রের চারপাশে খুঁজে পাওয়া যাবে আরও নক্ষত্র বা এক্সোপ্ল্যানেট। পাশাপাশি একটি নক্ষত্রের বয়স কত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে নক্ষত্রটি কীভাবে পরিবর্তিত বা বিবর্তিত হয়েছে, তাও নির্ধারণ করা যাবে এর মাধ্যমে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।