সম্প্রতি কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে জাপানি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা। এই প্রথম কোনো কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে গেল। স্যাটেলাইটটি ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। গত ৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। স্পেসএক্সের ফ্যালকন রকেটে করে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে এটি। স্যাটেলাইটটির নাম দেওয়া হয়েছে লিগনোস্যাট। কাঠের ইংরেজি শব্দ উড এসেছে লাতিন শব্দ ‘লিগনো’ থেকে। সেখান থেকেই এই স্যাটেলাইটের এমন নাম।
এটি তৈরি করা হয়েছে জাপানের ম্যাগনোলিয়া নামে গাছের কাঠ থেকে। জাপানের চেরি ও বার্চ কাঠও পরীক্ষার জন্য মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোও পরীক্ষায় পাশ করেছে। কিন্তু বাছাই করা হয়েছে ম্যাগনোলিয়া। কারণ, এটি উৎপাদনের সময় ভাঙার সম্ভবনা সবচেয়ে কম। তা ছাড়া এই কাঠ আঠা বা স্ক্রু ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী জাপানি কারুশিল্পের সাহায্যে জোড়া লাগানো যায়।
১০ মাস গবেষণা করে এ কাঠ নির্বাচন করেছে জাক্সা। কাঠের মোট তিনটি নমুনা পরীক্ষা করা হয় মহাকাশ স্টেশনে। মহাশূন্যে বাতাস না থাকলেও আছে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মির মুক্ত বিচরণ। তাপমাত্রা সেখানে ভীষণ কম। এক কথায় চরম প্রতিকূল পরিবেশ। এমন পরিবেশে কাঠ দশ মাস রাখার পরও পচেনি। চারপাশে মাত্র ১০ সেন্টিমিটার আকারের এই স্যাটেলাইটের ওজন ৯০০ গ্রাম।
মহাকাশে কাঠ কতটা কাজের হবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন কর্মসূচির ডেপুটি চিফ সায়েন্টিস্ট মেগান এভারেট। তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘মহাকাশে কাঠের ব্যবহার নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু গবেষকদের আশা, বর্তমানে প্রচলিত স্যাটেলাইটের চেয়ে কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট বেশি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হবে।’
বর্তমান স্যাটেলাইটগুলো মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। ওগুলোর কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পুড়ে যায়। ফলে সেগুলো পুড়ে তৈরি হয় অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, যা পৃথিবীর তাপীয় ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজন স্তর।
এখানেই গবেষকেরা এগিয়ে রাখছেন কাঠের তৈরি স্যাটেলাইটকে। মহাশূন্যে কাঠ পচে না বা নষ্ট হয় না। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এটি আগুনে পুড়ে মিহি ছাইয়ের কণায় পরিণত হবে। ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য এটি এক দারুণ কার্যকর বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান।
এ ছাড়াও ধাতু ব্যবহার করে মহাকাশযান বানানো ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা মানুষবাহী নভোযানের জন্য তা ক্ষতিকর। কোনো কারণে ধাতব মহাকাশযানের অংশ পৃথিবীতে ঢুকে পড়লে তা পৃথিবীর মানুষের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। লিগনোস্যাটের মতো কাঠের তৈরি মহাকাশযান এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
লিগনোস্যাট সফলভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছেছে। সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় আকৃতির কাঠের স্যাটেলাইট তৈরি করবে বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।