বিজ্ঞানীদের মধ্যে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি সম্পর্কে নানা মতামত ও গবেষণা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বের শেষ দেখা দিতে অনেক আগেই আমরা তা উপলব্ধি করতে পারব। এর আগে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি সম্পর্কে যা ধারণা করা হয়েছিল, তা থেকে অনেক দ্রুত ঘটতে যাচ্ছে এটি। মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে গবেষকরা যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন, তা শুধু বিজ্ঞানী মহলেই নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও একটি চমক হিসেবে পরিণত হয়েছে।
Table of Contents
এই গবেষণাটি নতুন আশঙ্কা ও চিন্তা উত্থাপন করেছে, তবে এখনো আমাদের জীবনের জন্য তা কোনো তৎক্ষণিক হুমকি নয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের এই চূড়ান্ত পরিণতি আসতে কমপক্ষে ১০৭৮১০৭৮ বছর সময় লাগবে, যা পূর্বের ধারণার তুলনায় অনেক দ্রুত হবে। তবে, এটি আমাদের জন্য কোনো আশঙ্কার কারণ হবে না, কারণ এটি ভবিষ্যতের এক চিরন্তন ঘটনা, যা অনেক বহু দূরের সময়ে ঘটবে।
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি: বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি নিয়ে গবেষণা এবং বিভিন্ন তত্ত্ব অনেক পুরোনো। তবে, সম্প্রতি ডাচ গবেষকদের একটি বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে, মহাবিশ্বের সমাপ্তি আসতে যে সময়কাল আগে ধারণা করা হয়েছিল, তা অনেক আগেই ঘটে যেতে পারে। এর পিছনে রয়েছে স্টিফেন হকিংয়ের ১৯৭৪ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, যেটি হকিং রেডিয়েশন নামে পরিচিত। এই তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি দাবি করেছিলেন যে, কৃষ্ণগহ্বর (ব্ল্যাকহোল) থেকেও বিকিরণ নির্গত হতে পারে, এবং এটির প্রভাবে ব্ল্যাকহোলের ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটে।
হকিং রেডিয়েশন, যদিও একটি ধীর গতির প্রক্রিয়া, তবে এটি মহাবিশ্বের নানা বস্তু—যেমন ব্ল্যাকহোল, সাদা বামন তারাসহ অন্যান্য জ্যোতির্বস্তুর বিলুপ্তির কারণ হতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলি শেষ হয়ে যাবে। মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তির সময়, যার জন্য পূর্বে ধারণা করা হয়েছিল ১০১১০০১০১১০০ বছর, এখন তা ১০৭৮১০৭৮ বছর হওয়া এক বিপ্লবী পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
গবেষণা সংক্রান্ত প্রধান লেখক হেইনো ফাল্কে বলেন, “মহাবিশ্বের সমাপ্তি আসতে আগের চেয়ে অনেক কম সময় লাগবে। তবে এটি কোনো তাড়াহুড়ো করার ব্যাপার নয়, কারণ এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বহু সময় পরে।”
Vivo V27 Pro: Price in Bangladesh & India with Full Specifications
মহাবিশ্বের বিলুপ্তি: বিভিন্ন বস্তু কিভাবে বিলীন হবে?
গবেষকরা জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন জ্যোতির্বস্তুর বিলুপ্তির সময়কাল একরকম হবে না। উদাহরণস্বরূপ, সাদা বামন তারা, যেগুলি মহাবিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বস্তু হিসেবে পরিচিত, তাদের বিলুপ্তি হতে সময় লাগবে ১০৭৮১০৭৮ বছর। অন্যদিকে, কিছু নিউট্রন তারা বা স্টেলার ব্ল্যাকহোল অনেক দ্রুত বিলীন হতে পারে, যেমন ১০৬৭১০৬৭ বছর। এমনকি মানুষের মতো বস্তু বা চাঁদের বিলুপ্তিও ১০৯০১০৯০ বছরে হতে পারে, যদিও এ সব বস্তুর বিলুপ্তি অন্য কোনো মহাজাগতিক ঘটনার কারণে আরও আগে ঘটতে পারে।
এটি একটি নতুন দৃষ্টিকোণ, যা মহাবিশ্বের অন্তর্গত নানা বস্তু ও শক্তির মাঝে কীভাবে একটি ক্রমাগত বিলুপ্তির প্রক্রিয়া কাজ করছে, তা বুঝতে সাহায্য করছে।
হকিং রেডিয়েশন এবং মহাবিশ্বের শেষ
হকিং রেডিয়েশন, যা স্টিফেন হকিং এর গবেষণার ফলস্বরূপ এসেছে, মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু যেমন ব্ল্যাকহোলের বিলুপ্তি ও শূন্যস্থানের মহাকর্ষীয় প্রভাবের মাধ্যমে ঘটে। হকিংয়ের তত্ত্বের মাধ্যমে, ব্ল্যাকহোলের মধ্য থেকে এক ধরনের বিকিরণ বেরিয়ে আসে, যা ধীরে ধীরে ব্ল্যাকহোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কমিয়ে দেয় এবং শেষপর্যন্ত তা বিলুপ্ত হয়।
এভাবে মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু একসময় একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে, এটি শুধু তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন গবেষণা এবং ফলাফলগুলোর ভিত্তিতেও সত্য হয়ে উঠছে।
মহাবিশ্বের শেষ: আগের তুলনায় দ্রুত?
সম্প্রতি এই বিষয়টি বিজ্ঞানী মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ পূর্বে মহাবিশ্বের শেষকে ধীরগতিতে ঘটতে হবে এমন ধারণা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হয়তো আরও দ্রুত ঘটবে। আর এই পরিবর্তন যে মহাবিশ্বের বিকিরণের মাধ্যমে ঘটবে, তা ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিজ্ঞানী এবং গবেষকের কাছে নিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
মহাবিশ্বের সমাপ্তি নিয়ে চিন্তা
গবেষণা বলছে যে মহাবিশ্বের সমাপ্তি কোনো তাত্ক্ষণিক ঘটনা নয়, কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে আমাদের জন্য পরিস্কার হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি আসতে সময় যথেষ্ট, তবে এটি মানবজাতির জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। বর্তমান পৃথিবী এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, গবেষকরা বলেন, “মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটলেও, তা আমাদের জীবনের জন্য কোনো তত্ক্ষণিক হুমকি নয়। এই বিলুপ্তির ঘটনা এক প্রক্রিয়া হিসেবে চলতে থাকবে, যা আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক দীর্ঘ হবে।”
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি এবং আমাদের অস্তিত্ব : যেহেতু মহাবিশ্বের সমাপ্তি আমাদের জন্য সরাসরি কোনো বিপদ সৃষ্টি করছে না, তাই এ বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে বিজ্ঞানী মহলের জন্য একটি নতুন উন্মোচন। এটি আমাদের কাছে মহাবিশ্বের অন্তর্গত শক্তি ও বস্তুর অদৃশ্য এবং বিমূর্ত দিকের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। তবে, এর সঙ্গে যুক্ত বিপদ এখনো আমাদের জন্য দূরবর্তী।
FAQ
১. মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি কীভাবে ঘটবে?
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি ব্ল্যাকহোল এবং অন্যান্য জ্যোতির্বস্তুর হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ঘটবে, যেখানে এসব বস্তু একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
২. মহাবিশ্বের শেষ হওয়ার সময় কতদিন পরে হবে?
গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে ১০৭৮১০৭৮ বছর সময় লাগবে, যা পূর্বের তুলনায় অনেক দ্রুত ঘটবে।
৩. হকিং রেডিয়েশন কি?
হকিং রেডিয়েশন হলো একটি তত্ত্ব, যার মাধ্যমে ব্ল্যাকহোল থেকেও বিকিরণ নির্গত হতে পারে এবং এটি ব্ল্যাকহোলকে ধীরে ধীরে বিলীন করে ফেলে।
৪. মহাবিশ্বের শেষ কি মানবজাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে?
গবেষকরা বলেন, মহাবিশ্বের সমাপ্তি আমাদের জীবনের জন্য কোনো তাত্ক্ষণিক বিপদ সৃষ্টি করবে না, এটি অনেক দূরের একটি ঘটনা।
৫. মহাবিশ্বের বিকিরণ কি সব কিছু বিলীন করবে?
হ্যাঁ, মহাবিশ্বের বিকিরণের মাধ্যমে ব্ল্যাকহোল এবং অন্যান্য বস্তু একসময় ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।