পিএইচডি গবেষণার সময়েই বানিয়েছিলেন বেতার দুরবিন। যৌথভাবে আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের এক দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্ক পালসার। অথচ নারী বলে হয়েছিলেন নোবেল বঞ্চিত। তিনি জোসেলিন বেল। আজ তাঁর জন্মদিন। মহাকাশে প্রথম পালসার আবিষ্কারের কৃতিত্ব কেমব্রিজের মুলার্ড বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান মানমন্দিরের।
১৯৫৭ সালে কেমব্রিজের লর্ডস ব্রিজে মানমন্দিরটি স্থাপিত হয়। স্থাপন করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরির একদল বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী। নেতৃত্বে ছিলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন রাইলে।
আধুনিক বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মুলার্ড মানমন্দির। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মাথায় ১৯৬৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি হিউইশ ও তাঁর ছাত্রী জোসেলিন বেল যৌথভাবে আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের এক দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্ক পালসার। পিএইচডি গবেষণার সময়ই জোসেলিন বেলকে বানাতে হয়েছিল বেতার দুরবিন।
এ ধরনের দুরবিন মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গকে সংগ্রহ ও সংহত করে শব্দ বা লেখচিত্র রূপে প্রকাশ করে। পালসার হলো একধরনের ঘূর্ণমান নিউট্রন নক্ষত্র। নিয়মিত সময় ব্যবধানে এটি বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বিকিরণ নিঃসরণ করে। কেমব্রিজের মুলার্ড বেতার মানমন্দিরের দুরবিনগুলো সারিবদ্ধ অ্যান্টেনা দিয়ে সাজানো। এসব অ্যান্টেনার একেকটা সারি একেক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
মার্টিন রাইলে, অ্যান্টনি হিউইশ ও জোসেলিন বেল তিনজনই একই পথের পথিক। তিনজনই বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। এঁদের মধ্যে মার্টিন রাইলে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক এবং মুলার্ড বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান মানমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। এর আগে তিনি কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের টেলিকমিউনিকেশনস রিসার্চ সংস্থায়। সংস্থাটি রাজকীয় বিমানবাহিনীর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বিমানবাহিত রাডারের (Airborne Radar) জন্য বিশেষ ধরনের অ্যান্টেনা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। যুদ্ধের পরে তিনি ফেলোশিপ পেয়ে কেমব্রিজের ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। বেতার দুরবিনের উন্নতিসহ আবিষ্কার করেন গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রপাতি। পরে কেমব্রিজ বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান দলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন তিনি। এই দলটি মহাকাশের বেশ কিছু বেতার উৎসের তালিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
এটি থার্ড কেমব্রিজ ক্যাটালগ অব রেডিও সোর্স (3C) নামে পরিচিত। পরে সময়ে কোয়াসি-স্টেলার অবজেক্ট (কোয়েজার) আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই তালিকা। একসময় কাজ করতে গিয়ে মহাবিশ্বের স্টেডি স্টেট তত্ত্বের প্রবক্তা ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মার্টিন রাইলে।
বিশেষ করে কেমব্রিজ বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান দল এবং ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রনমির মধ্যে সহযোগিতামূলক কাজে বিধিনিষেধ আরোপের জন্য। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল ছিলেন ইনস্টিটিউটের প্রধান এবং একজন প্রভাবশালী জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
অ্যান্টনি হিউইশও মার্টিন রাইলের অনুসারী ছিলেন। লেখাপড়া করেন লন্ডনের কিংস কলেজে। স্নাতক ও পিএইচডি ডিগ্রি করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পিএইচডির পর যোগ দেন বিখ্যাত ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরির মার্টিন রাইলের বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা দলে।
তিনি ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরির বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং মুলার্ড বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান মানমন্দিরের প্রধান ছিলেন। তাঁর অধীনে পিএইচডি গবেষক ছাত্রী ছিলেন জোসেলিন বেল। যৌথভাবে তাঁরা আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের প্রথম দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্ক পালসার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।