সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বৈশ্বিক ও আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপে। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ চার মাস পর আবারো আলোচনায় এসেছে মহার্ঘ ভাতা। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে আগামী ২০ মে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। মহার্ঘ ভাতার খবর এখন দেশের লাখো সরকারি কর্মচারীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
মহার্ঘ ভাতার খবর: সরকারি চাকরিজীবীদের আশার আলো
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের পরিকল্পনা থাকলেও তীব্র সমালোচনার কারণে সেটি বাস্তবায়ন থেমে যায়। অথচ ২০১৫ সালে সর্বশেষ বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার পর আর কোনো কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। এই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, ফলে কম আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
Table of Contents
সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্থ মন্ত্রণালয় ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ এবং প্রথম থেকে দশম গ্রেডের জন্য ১০-১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব করেছে। যদি এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, তাহলে সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী উপকৃত হবেন।
বিস্তারিত পড়ুন: জাতীয় সংবাদ
মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের খরচ ও আর্থিক প্রভাব
অর্থ বিভাগের খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। প্রথম থেকে দশম গ্রেডে ১৫ শতাংশ ভাতা দিলে এই খরচ বেড়ে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সুপারিশ এসেছে যে, ইনক্রিমেন্ট সুবিধা বাতিল করে কেবল মহার্ঘ ভাতা কার্যকর করা যেতে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দকৃত ৮৪ হাজার কোটি টাকার সাথে এটি সংযুক্ত হলে বাজেটের প্রায় ১২ শতাংশ এ খাতে ব্যয় হবে।
কমিটি, সুপারিশ ও বৈঠকের পূর্বাভাস
সাত সদস্যবিশিষ্ট পর্যালোচনা কমিটি
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গঠিত সাত সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সুপারিশ করে। এই কমিটি গ্রেডভিত্তিক ভাতার পক্ষে মত দেয় এবং কার্যকরের জন্য প্রধান উপদেষ্টার সচিবের নেতৃত্বে প্রস্তাব প্রণয়ন করে।
২০ মে’র বৈঠক
আগামী ২০ মে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে উপস্থাপন করা হবে।
জনমত ও সমালোচনার পটভূমি
অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন সময়ে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নতুন বেতন কাঠামো না থাকায় এটি একটি ন্যায্য দাবি।
এই বিষয়ে পড়ুন: অর্থনীতি সংবাদ
সার্বিকভাবে, মহার্ঘ ভাতার খবর শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই মাস থেকে এটি কার্যকর হলে কর্মচারীদের আর্থিক স্বস্তি আসবে এবং সরকারি সেবার মানোন্নয়নেও প্রভাব পড়বে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
মহার্ঘ ভাতা কী?
মহার্ঘ ভাতা হলো একটি অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা যা কর্মচারীদের জীবিকার ব্যয় মেটাতে সহায়তা করে, বিশেষত উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়।
মহার্ঘ ভাতা কবে থেকে কার্যকর হতে পারে?
যদি ২০ মে’র বৈঠকে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, তাহলে জুলাই ২০২৫ থেকে মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হতে পারে।
কারা এই ভাতা পাবেন?
সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী, যাদের গ্রেড ১ থেকে ২০ এর মধ্যে পড়ে, তারা এই ভাতা পাওয়ার সম্ভাব্য সুবিধাভোগী।
এই ভাতার আর্থিক প্রভাব কেমন হবে?
প্রস্তাবিত মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নে বছরে অতিরিক্ত ৫-৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হবে কি?
হ্যাঁ, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বাতিল করার প্রস্তাব রয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কি?
না, এটি এখনো প্রস্তাব আকারে রয়েছে। ২০ মে’র বৈঠকের পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।