অর্থনৈতিক সংকটে যখন সাধারণ মানুষ জীবনযুদ্ধে লড়ছে, তখন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালুর উদ্যোগ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাসের মতো। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্কালে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা ও উত্তেজনা তুঙ্গে। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানান, আসন্ন বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা: একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত
বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি—এই সবকিছু মিলিয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা অর্থনৈতিক চাপে আছেন। তাদের এই চাপ কিছুটা লাঘব করতেই সরকার মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
Table of Contents
অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা এই ভাতার হার নির্ধারণ এবং বাজেটে অন্তর্ভুক্তির উপযুক্ততা পর্যালোচনা করছে। এটি স্পষ্ট যে, সরকার এই বিষয়ে নিরুৎসাহ নয়, বরং সক্রিয় মনোভাব পোষণ করছে। তবে ঠিক কত শতাংশ হারে এই ভাতা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সরকারি পর্যায়ে আলোচনায় উঠে এসেছে যে, সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এর আগেও, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গঠিত সাত সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গ্রেডভিত্তিক ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। যদিও সেই উদ্যোগ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে স্থগিত রাখা হয়।
বাজেট প্রস্তুতির অগ্রগতি ও কর্মপরিকল্পনা
বাজেট প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলছে পুরোদমে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভাতা কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে বাজেটে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা। এই খরচ কীভাবে সংস্থান করা হবে, সে বিষয়েও হিসাব-নিকাশ চলছে। বাজেট প্রণয়ন, মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন এবং প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত সম্মতি—এই প্রক্রিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
বর্তমানে আলোচনায় থাকা ভাতার হার ১০-২০ শতাংশ, যা গ্রেড অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য উচ্চ হারে ভাতা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “আমি বাজেটের ওয়ার্কআউট করে দেখি, কখন থেকে দিতে পারবো, কত দিতে পারবো।”
এছাড়া, ভারতের সাম্প্রতিক আমদানি বিধিনিষেধ এবং এনবিআর ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এই বিষয়ে যথাসময়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
ভাতার ইতিবাচক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ
মহার্ঘ ভাতা চালুর ফলে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়বে। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও ফেলবে, যা কর্মপ্রেরণায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে এটি সরকারি খাতে কর্মরতদের মধ্যে আস্থা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী যদি ন্যূনতম জীবনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে না পারে, তবে কর্মক্ষমতা এবং সামাজিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালু হলে তা একটি ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হবে।
সরকারি মহলে এই ভাতার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্ত। তবে বেসরকারি খাতের কর্মচারীরা এই উদ্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে কিছু সমালোচনাও রয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের পূর্বে সরকারের উচিত অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা। একই সঙ্গে এটি যেন অর্থনৈতিক ভারসাম্যে বিঘ্ন না ঘটায়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
FAQs
- মহার্ঘ ভাতা কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে?
বর্তমানে কেবল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। - ভাতার হার কত হতে পারে?
সরকারি পর্যায়ে আলোচনায় রয়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা চালুর প্রস্তাব। - কবে থেকে মহার্ঘ ভাতা চালু হতে পারে?
২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকেই এই ভাতা কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। - বেসরকারি চাকরিজীবীরা কি এই ভাতা পাবেন?
এই মুহূর্তে কেবল সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রযোজ্য হচ্ছে। - এই ভাতার জন্য বাজেটে কত বরাদ্দ থাকবে?
এখনো চূড়ান্ত নয়, তবে কয়েক হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। - আগামী বাজেট কবে পেশ হবে?
আগামী জুন মাসেই জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।