জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সুধীমহলে।
বন্দর উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লা ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে লেখা একটি স্ট্যাটাসে “মাইরের উপরে ঔষধ নাই” এমন মন্তব্যকে সরকারের নীতি বহির্ভূত মত বলে মনে করছেন জেলার বিশিষ্টজনরা।
ইতোমধ্যে তার ওই স্ট্যাটাসের লেখাটি শেয়ার করেছে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। এতে শত শত মানুষ কমেন্ট করে সমালোচনা করছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর ইউএনও’র ষ্ট্যাটাসটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সরকার যেখানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মারধরের বিপক্ষে সেখানে ইএনও’র এই ধরনের স্ট্যাটাস সরকারের বিপক্ষে অবস্থান করে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্টজনরা। নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সরকারের নীতি পরিপন্থী এই মন্তব্যে।
পাঠকদের অবগতির জন্য ইউএনও ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রী আসছে, এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় সবাই দুইয়ের অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য। আবদার আমি যেন তাদের পাশ করে দেবার সুপারিশ করি। তাদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা ফেল করলো, ছাত্রছাত্রীদের ভাষ্য – এই একটু সমস্যা ছিল। কি সমস্যা খোলাসা করে বলে না। বেশিরভাগ মা বাবা বলল তাদের সন্তানরা পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল। অসুস্থতার ধরন জিজ্ঞেস করলে বলে সবার জ্বর ছিল। কেউ কেউ বলল কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নাই তাই ফেল করিয়েছে। কোন কোন মা বলল তাদের সংসারে অশান্তি, ছেলে পড়তে পারেনি। একজন ছাত্র বলল প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে ঢুকতে দেয় না, চুলে আর্মি কাট দিতে বলে এবং খুব আশ্চর্য লাগলো ছেলের মাও একই বিষয়ে অভিযোগ করছে! জিজ্ঞেস করলাম এইচএসসি-র পুর্নরূপ কি? মাশাল্লাহ কেউই বলতে পারলো না।
ওহো এর মধ্যে আবার সরকারি স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া ছেলেমেয়েদের বাবা মা আছেন। আজ একজন বাবা তার মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পেরোনো ছেলের সামনে বলছেন, ম্যাডাম আমার ছেলে বলে দিছে সে যদি এই স্কুলে না ভর্তি হতে পারে তাহলে আর লেখাপড়াই করবে না! সাব্বাস বাপ বেটা! শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের মনে কেন এত মায়া, মায়ার বশে আপনারা পরীক্ষার হলে বাচ্চাদের কথা বলতে দেন। তারা একজন আর একজনের দেখে লিখলেও আপনারা তা দেখেন না। এখনো কেন শুনতে হয়, এই চুপ কর, ম্যাজিস্ট্রেট আসছে। আপনারা মনে করেন বাচ্চাগুলা পাশ করুক, ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষার হলে সুযোগ দিয়ে কেন? কেন আপনাদের শুনতে হবে আপনাদের কাছে না পড়লে আপনারা ফেল করায় দেন। আপনারা কি ভাবেন এতে করে বাচ্চাগুলার উপকার হচ্ছে, তারা আপনাদের মনে রাখবে? একটা সময়ে এরাই আপনাকে অসম্মান করবে, পাত্তাই দেবে না।
প্রিয় বাবা মা, আপনি আপনার সন্তানের সামনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, শিক্ষককে ছোট করছেন, আপনার সন্তান আর কদিন পর আপনাকে সম্মান করবে তো! সন্তান ফেল করলে/ চান্স না পেলে সব শিক্ষকের দোষ। প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সিস্টেম ভাল না, টাকা খেয়েছে ব্লা ব্লা। কোনো শিক্ষকের কি এই সাধ্য আছে যে খাতায় লেখার পরও তাকে ফেল করায় দেয়! যে বাচ্চাটা ইংরেজিতে তিন/তের পেয়েছে তাকে কিভাবে তেত্রিশ করবে! বাচ্চাকে শখ করে, আদরের আতিশয্যে, আধুনিকতার সংস্পর্শে আইফোন কিনে দিলেন, বাইক কিনে দিলেন। কিন্তু সে আদৌ স্কুলে/কলেজে যায় কিনা কয়দিন খোঁজ নিয়েছেন। সে কার সাথে চলাফেরা করে খোঁজ নিয়েছেন শেষ কবে? কবে সে অন্য কাউকে খুব ছোট্ট কাজে ধন্যবাদ বলেছে? আচ্ছা সে কি কখনও তার স্কুলের দপ্তরীকে সালাম দিয়েছে? সে কি স্কুলের মাঠ যে ঝাড়ু দেয় তাকে থ্যাংকু বলেছে? সে যে রিকশায় আসা যাওয়া করে তাকে কোনেদিন থ্যাংকু বলেছে?
“সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : মাইরের উপর ঔষধ নাই !”
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রদের মারধর করা সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কারণ সরকার শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করার বিপক্ষে। ফলে ইউএনওর কথা সরকারের নীতির বিপক্ষে।
তিনি বলেন, আমাদের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে। সেসব অস্বীকার করার উপায় নেই। অভিভাবকদেরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে একজন ইউএনও এ কথা বলতে পারেন না মন্তব্য করে তিনি বিষয়টি তদন্তসহ ইউএনও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
বিশিষ্ট কবি আরিফ বুলবুল বলেন, সংবিধানে ‘মাইরের উপরে ঔষধ নাই’ এমন কোনো কথা নেই। ইউএনও রাষ্ট্রের অংশ। সে এ কথা লিখতে পারে না। বাচ্চাদের মারার কারণে অনেক শিক্ষকের শাস্তিও হয়েছে। সেখানে ইউএনও শিশুদের মারার পক্ষে কিভাবে কথা বলে আমি জানি না।
তিনি বলেন, অনেক পরিবারেই অনেক অশান্তি রয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সব অভিযোগই মিথ্যা না-ও হতে পারে। কিন্তু ইউএনও’র লেখায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নেই। বরং এক ধরনের অবজ্ঞা রয়েছে। তবে তিনি ঝাড়ুদারের সাথে, রিকশাচালকের সাথে যে আচরণের কথা বলেছেন সেগুলি সঠিক। সেসব ভালো আচরণ বাচ্চাদের করা উচিৎ। তবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটিই ত্রুটিপূর্ণ।
তবে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লা জানান, মূলত ছেলে মেয়েদের অন্যায্য আবদার নিয়ে যেসকল অভিভাবকরা আসেন তাদের উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে স্ট্যাটাসটি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন করতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পাঠদান ও ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমার এই লেখাটি। তবে এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারি দফতরের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।