জুমবাংলা ডেস্ক: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বর ইউনিয়নের আলী হোসেন ও শিরিন বেগমের মেয়ে শাহনারা শৈশবে নিজ পরিবার হারিয়ে ফেলেছিলেন। ভুলে গিয়েছিলেন বাবা ও মায়ের নাম পরিচয়। সুদীর্ঘ ২৫ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে এখন আনন্দে ভাসছেন শাহানারা।
শৈশবে তার হারিয়ে যাওয়াও ছিলো আরেক করুণ গল্প। তখন শাহানারার বয়স ছিলো ৬। বাবা আলী হোসেন ও মা শিরিন বেগমের সংসারে খুব অভাব ছিলো। বাবা কিছুটা মানসিক রোগীও ছিলেন। এ অবস্থায় বাবা-মা তাদের ৬ বছরের মেয়েকে কলাপাড়া পৌর শহরের এক ব্যক্তির বাসায় কাজে দেন। সেখানে গ্লাস ভাঙার অপরাধে গৃহকর্ত্রী শাহানারাকে মারধর করেন। ফলে শাহানারা সেখান থেকে পালিয়ে লঞ্চযোগে বরিশালে চলে যান। লঞ্চঘাটে এক নারী তাকে পেয়ে পুলিশের মাধ্যমে বরিশালের আমতলা এলাকার সেইফ হোমে পাঠান।
এদিকে মা শিরিন বেগম মেয়েকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে তিনিও অনেকটা পাগলের মতো হয়ে যান। পরে স্বামী আলী হোসেনকে ডিভোর্স দেন। নতুন করে ঘর বাঁধেন অন্য একজনের সঙ্গে।
শাহানারাকে সেইফ হোম থেকে পাঠানো হয় বরিশালের একটি প্রতিবন্ধী সামাজিক বিদ্যালয়ে। সেখানে লেখপাড়া শেষে প্রায় ১৬ বছর আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার বিয়ে হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের খালেকের সঙ্গে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা সুজন হাওলাদার নামে এক যুবকের মাধ্যমে এই মা এবং মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় ধুলাস্বর ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিরিন তার মেয়েকে দেখেই চিনতে পারেন। পরে ছোট সময় শাহানারা হাঁটুর নিচে গরম পানি পড়ে দাগ হয়ে যাওয়া স্পট দেখে শনাক্ত করেন তার মেয়েকে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা সুজন বলেন, শাহানারা গত একমাস আগে মৎস্য বিভাগের একটি ট্রেনিংয়ে কাজ করতে আসেন নিজ গ্রামে। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না এটাই তার জন্মস্থান। তবে তার সন্দেহ হচ্ছিলো এই গ্রামটি তার কেনো যেনো পরিচিত লাগে। পরে তিনি তার হারানোর বিষয়টি আমার কাছে খুলে বলেন। আমি এলাকার সবাইকে জানিয়ে দেই। বিকালে ইউনিয়ন পরিষদে অনেকেই হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজতে আসেন। এসময় শাহানারা ও শিরিনের হারিয়ে যাওয়ার কথা মিলে যায় এবং শিরিন তার মেয়ের হাঁটুর নিচের স্পট দেখে চিনতে পারেন।
শাহানারা বলেন, গত কয়েক মাস আগে আমি সরকারিভাবে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ট্রেনিং করতে এই গ্রামে আসি। আসার পর থেকেই কেমন যেনো আমার কাছে এই গ্রামটা পূর্ব পরিচিত মনে হয়। এক পর্যায়ে আমি এখানের পরিচিত একজনের সহযোগিতা নেই। পরে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান এবং অনেকের সহযোগিতায় আমি আমার পরিবার এবং মায়ের খোঁজ পাই। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই যে আমি আমার হারানো পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। আমি এখন অনেক খুশি, এরপর আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
শাহানারার মা শিরীন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ৬ বছর। এরপর থেকে আমি খুজি নাই- এমন কোন জায়গা নাই। এই মেয়ের জন্য আমি প্রতিদিন কান্না করেছি। আল্লাহতায়ালা আমার মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
শাহানারার স্বামী আ. খালেক(৬০) বলেন, গত ১৬ বছর আগে আমার প্রথম স্ত্রী মারা যায় এরপরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এতিমখানা থেকে আমি শাহানারাকে (বর্তমান নাম ইয়াসমিন) বিবাহ করি। আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে। এতদিন জানতাম যে তার কোনো পরিবার নেই। তবে আজকে থেকে নতুন পরিবার পেলাম। এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। পরবর্তী জীবনগুলো আমরা একসাথে কাটাতে চাই।
ধুলাস্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, আমার কাছে আসার পরে আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে তার পরিবারের সন্ধান পাই। পরে তার হারিয়ে যাওয়ার কথা উভয় পক্ষের কাছে শুনে নিশ্চিত হই যে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি এই শাহানারা। তিনি তার মায়ের কাছে এবং পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।