জুমবাংলা ডেস্ক: পদ্মা সেতু চালুর পর সাতক্ষীরায় মাছের ঘেরের আইলে উৎপাদিত সবজির একটি অংশ এখন সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে। সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি উঠিয়ে সরাসরি রাজধানীতে পাঠাচ্ছেন।
জেলায় চলতি মৌসুমে চিংড়ি ঘেরের আইলের ৮৭৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। নিচে মাছের চাষ হওয়ায় এই সবজির ক্ষেতে কোন রকম বিষ প্রয়োগ করা হয় না। ফলে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি বাজারে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
সাতক্ষীরার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাছের ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ। ‘সাথী ফসল’ হিসেবে শুরু হলেও এখন মূল ফসলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সমানে সমান। মাচায় বা ঘেরের আইলে সবজি আর নিচের পানিতে মাছ চাষ হচ্ছে। জেলায় প্রতি বছর যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ঘেরের আইলে মাচা পদ্ধতিতে। ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে সবজির চাষাবাদ দিন-দিন বাড়ছে। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও পাঠানো হচ্ছে সাতক্ষীরার সবজি।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৮৭৫ হেক্টর জমির (মৎস্য ঘেরের বেড়ি) আইলে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর, তালায় ১৬৫ হেক্টর, কলারোয়ার ৫৫ হেক্টর, আশাশুনি ৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৩৫ হেক্টর,
দেবহাটায় ২০ হেক্টর, ও শ্যামনগর উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমির আইলে সবজির চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে হেক্টর প্রতি গড় ১৯ মেট্রিকটন হারে মোট ১৬ হাজার ৬২৫ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে ও ঘেরের আইলের উপরে নির্মিত সারি-সারি মাচায় ঝুলছে করলা, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, কুমড়া আর শসা। বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন অনেকে।
সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি বিলে শত-শত বিঘা জমির মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া ও করলার চাষাবাদ করা হয়েছে। মাচায় ঝুলছে হাজার-হাজার করলা, শতশত লাউ ও কুমড়া। একই সাথে ঘেরের পাড়ে লাগানো হয়েছে পুঁইশাক ও ঢেঁড়স।
পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের জাফর সরদারের ছেলে কৃষক ইসরাইল হোসেন জানান, আমি ১৬ একর জমিতে মৎস্য ঘের করেছি। তার তিন পাশে সবজি চাষ করেছি। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে ও বাজারদর ভালো পেলে আশাকরি আমি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো।
একই এলাকার অপর মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী মোহর আলী জানান, তিনি প্রায় ১ একর জমিতে মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন। ঘেরের বেড়ির চারপাশ দিয়ে ডাবল সিস্টেমে বেড়া দিয়ে সবজির মাচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ঘেরের সবজি থেকে ৫০হজার টাকার বেশি মুনাফা অর্জন করা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম জানান, জেলার অধিকাংশ ঘেরের পাড়ে এখন সবজি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে- লাউ, উচ্ছে, শসা, পটল, ঢেঁড়স ও বরবটি বাজারে উঠেছে। কৃষকেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এখন সাতক্ষীরা থেকে ৪/৫ ঘন্টায় ঢাকায় যাওয়া যাচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি উঠিয়ে সরাসরি ঢাকায় পাঠাতে শুরু করেছেন।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।