জুমবাংলা ডেস্ক : নানি-দাদিদের মুখে ঘুমপাড়ানি ছড়া ‘ধান ভানলে কুড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব’ শুনে শৈশব কেটেছে এক দশক আগের শিশুদের। হয়তো কোন দূরবর্তী অতীতে কিংবা রূপকথায় মাছ কাটার বিনিময়ে মুড়ো দেয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় মাছ কাটার বিনিময়ে মুড়ো বা মাছের মাথার দখল নিয়েছেন যারা বাজারে বসে মাছ কাটছেন তারা। শহরের সৌখিন গৃহিণীরা যখন মাছ কাটবেন না তখন গৃহকর্তাকে এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়। গত প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পেশাটি হয়ে উঠেছে অনেকের আয়ের প্রধান ও একমাত্র উৎস।
রাজধানী ঢাকার মাছ-বাজারগুলোতে মাছ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বঁটি নিয়ে বসেন কিছু লোক। ক্রেতা মাছ কেনামাত্র তারা সেগুলোর আঁশ ছাড়িয়ে চাহিদামত কেটে দেন। তারা কাজটি করেন অল্প সময়ের মধ্যে। বিনিময়ে পান অর্থ। মাছের পরিমাণ অনুযায়ী পারিশ্রমিকে রয়েছে তারতম্য।
প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে প্রতিদিন আয় কত হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে পাঠক হয়তো একটু হকচকিয়ে যাবেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এ পেশায় জড়িতদের শুধু মাছ কেটেই প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। পুঁজিবিহীন এ পেশায় তারা শুধু বসার জায়গাটি ভাড়া নেন। এরপর কাজের জন্য প্রয়োজন শুধু একটি বঁটি। কারওয়ান বাজারে এমন বঁটিওয়ালার সংখ্যা প্রায় দশজন। সেখানে প্রায় ৪ বছর মাছ কাটার কাজ করছেন সাইফুল ইসলাম।
যেখানে বসেন জায়গাটির ভাড়া প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা। একা সব কাজ সামলে উঠতে পারেন না। এ কারণে ছোট ভাইয়ের সহযোগিতা নিতে হয়। প্রতিদিন ভোরবেলা কাজ শুরু করেন। মাঝখানে দু’ঘণ্টার জন্য মধ্যাহ্নের বিরতি। বিকেলে আবার কাজ শুরু। কাজ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
সাইফুল জানান, মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা আয় হয়। তবে শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমার একটু বেশি পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, প্রতি ১ কেজি মাছ কাটলে ২০ থেকে ৩০ টাকা পাওয়া যায়। পরিমাণে বেশি হলে টাকা কিছু কম নেয়া হয়। আবার ছোট মাছ কাটতে সময় বেশি লাগে, তাই সেগুলোর পারিশ্রমিক বেশি।
প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা আয় করলে মাস শেষে আয় দাঁড়ায় প্রায় ৯০ হাজার টাকা। মোট আয় থেকে প্রতিমাসে শুধু দোকান-ভাড়া ও সহযোগীর বেতন ছাড়া অতিরিক্ত কোন খরচ নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে বাজারে কিছুটা ভাটা পড়ে। সেক্ষেত্রে আয়
কিছুটা কমে যায়। তবে প্রতিদিনকার রোজগারের সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে চাইলেন না অনেকেই। এবং এই অঙ্ক যে অনেকের আরো বেশি হবে তাতে সন্দেহ নেই।
এই প্রতিবেদকের সামনেই সাইফুল হোটেলের বিশ কেজি রুই মাছ কাটার অর্ডার পেলেন। কত পারিশ্রমিক পাবেন জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে এড়িয়ে গেলেন। তবে তার সহকারীর কাছ থেকে জানা গেল, টাকা তুলনামূলক কম পাবেন। যেগুলো আবার অন্যদের কাছে বিক্রি করবেন। বড় একটি রুই অথবা কাতল মাছের মাথা ৪০ টাকা করে বিক্রি করবেন বলেও জানালেন তিনি।কারওয়ান বাজারে প্রায় ৬ মাস হলো মাছ কাটছেন মো. বাবু।
তিনিও প্রতি মাসে দোকান ভাড়া দেন ৮ হাজার টাকা। পূর্বে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ক্যান্টিনে মাছ কাটার চাকরি করতেন। মাসিক বেতন ছিল ৩২ হাজার টাকা। বেশি আয়ের আশায় চাকরি ছেড়ে নিজেই দোকান দিয়েছেন মাছ কাটার। বাবু বলেন, শুরুর দিকে আয় বেশি হতো। এখন একটু কম হচ্ছে। এখন বাজারে মাছের ক্রেতা কম। এজন্য আয়ও কমে গেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।