জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় ৩০ বছর আগের এক পুরাতন কবরকে নতুন করে মাজার বানিয়ে ভণ্ডামির অভিযোগে তা ভেঙে দিয়েছেন স্থানীয় যুবকরা। প্রায় একমাস আগে স্থানীয় তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ নামের এক ব্যক্তি ওই কবরটিকে মাজার বানিয়ে আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামের যুবকরা মাজারটির আস্তানা সরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা বলেন, একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী আব্দল্লানগর গ্রামের এক পুরাতন মাজারের খাদেম ছিলেন একই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ (সারা বছর খালি গায়ে থাকার কারণে উদাম শাহ নামে পরিচিত)। প্রায় একমাস আগে ওই মাজার কমিটির সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে খাদেম উদাম শাহ সেখান থেকে বিতাড়িত হন। বিতাড়িত হবার পর তিনি চলে আসেন পার্শ্ববর্তী লাখপুর গ্রামের পিপঁড়াটুলী মসজিদের নিকটে।
সেখানে লাখপুরের কতিপয় লোকের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতা করে সাধন ভজনের অজুহাতে ৩০ বছরের পুরাতন হাছেন আলীর কবরকে পাকা করে মাজার তৈরি করেন এবং তার পাশেই টিনসেডের এক আস্তানা তৈরি করেন। ওই আস্তানা থেকে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন রোগ সারানোর জন্য পানি পড়া দিতে থাকেন উদাম শাহ। এভাবে প্রায় ১৫ দিন অতিক্রম হলে এলাকার কতিপয় যুবক ভণ্ডামির অভিযোগে সম্মিলিত হয়ে আস্তানা ভেঙে দেন। এলাকাবাসী আরও বলেন, আব্দুল্লাহনগর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম চরআমলাব গ্রামের মৃত সুফি ফজলুল হক ফালু শাহের ভক্ত। ১২ মাসই খালি গায়ে থাকার কারণে তাকে অনেকেই উদাম শাহ নামে ডাকেন। তিনি আব্দুল্লানগর গ্রামের এক মাজারের খাদেম থাকাবস্থায় সেখানে ভক্ত ও শিষ্যদের কাছে অতিরিক্ত টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মাজার কমিটির সাথে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে পুরাতন কবরে নতুন আস্তানা গড়ে তোলেন।
সরেজমিন লাখপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মৃত হাছেন আলী ওরফে হাছুইন্না ফকিরের কবরকে মাজারের মত করে পাকাকরণ করা হয়েছে এবং এতে লাল গামছা জড়িয়ে রাখা হয়েছে। মাজারের পাশেই ছড়ানো ছিটানো আগরবাতি, ভক্ত ও সাধারণ মানুষকে পানি পড়া দেয়ার ভাঙা মাটির কলস, কিছু শুকনো ফুলের অংশ ও পাশেই টিন দিয়ে তৈরি করা ভেঙে ফেলা উদাম শাহের আস্তানা। স্থানীয় সচেতনমহল জানান, গ্রামের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ব্যবসার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিল মাজারটি।
মৃত হাসান আলী ওরফে হাছুইন্নার ছেলে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার বাবা জীবদ্দশায় ফকিরী লাইনে জীবনযাপন করেছেন। উনি মারা যাবার পর (প্রায় ৩০ বছর) প্রায় ছয় বছর আগে কবরটি আমরা মাজারের মত করে পাকা করি। এ কবরের পাশে সাধন করার উদ্দেশ্যে আস্তানা গড়েন তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ।’ তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ এর চাচা মো. আউয়াল বলেন, ‘মরহুম হাসান আলী ফকির একজন সাধক ছিলেন। উনার কবরের পাশেই তাজুল ইসলাম আস্তানা করেছে সাধন করার উদ্দেশ্যে। আসলে ব্যবসা করার কোন উদ্দেশ্য ছিল না।’ বেলাব উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও পার্শ্ববর্তী উজিলাব গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন নীলু বলেন, ‘তাজুল ইসলাম আমাদের উজিলাব বাজারে দীর্ঘদিন পাহারাদার হিসেবে চাকরি করেছেন। সাধনের নামে তিনি ১২ মাস খালি শরীরে থাকে। কিন্তু এক পুরাতন কবরকে মাজার বানানো ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই না।’
অভিযুক্ত তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ বলেন, ‘আমি সাধনের জন্যই এই জায়গাটিতে আস্তানা করেছিলাম। পুরাতন কবরটি এক ধার্মিক লোকের। তাই আমি উক্ত মাজারে বাতি দিয়েছি, পাশের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েছি। আমি পাগল মানুষ কারো ক্ষতি করিনি। কিন্তু এলাকার কিছু ছেলেরা মিলে আমার আস্তানা অন্যায়ভাবে ভেঙে দিয়েছে। বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফখরুউদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, রাতারাতি এক পুরাতন কবরকে মাজার বানানো ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই না। তবে এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।