আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং বিতর্কিত নির্বাচন ছিলো ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোরের মধ্যে এ নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে তৈরি হয়েছিল তীব্র বিবাদ। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছিল সুপ্রিমকোর্ট থেকে।
দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান এতটা কম আর কখনও ছিলো না যুক্তরাষ্ট্রে। নির্বাচনের ফল ঘিরে এক মাস ধরে চলেছিল অনেক নাটকীয় ঘটনা।
এবারও রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
২০০০ সালের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান মাত্র এক ইলেকটোরাল ভোট। দেশটিতে ইলেকটোরাল কলেজ বলে যে পদ্ধতি চালু আছে, তাতে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিটি রাজ্যের জন্য ঠিক করা হয় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা। কিছু রাজ্যে এ ভোটের সংখ্যা মাত্র তিনটি বা চারটি।
আবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ভোটের সংখ্যা ৫০-এর বেশি ও ফ্লোরিডায় ২৫টি। সেবার অন্য সব রাজ্যের ফলে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুবই কম ছিলো। তখন ফ্লোরিডার ভোট গণনা নিয়ে চরম বিতর্ক হয়। কিন্তু নভেম্বরের ৭ তারিখে ভোটের দিন পর্যন্ত এ নির্বাচনে কে জিতবে কিছুই বোঝা যাচ্ছিলো না। কারণ জনমত জরিপে দুজনের ব্যবধান ছিলো খুবই কম।
ফলাফল প্রকাশের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন টাইম রাত ৮টার সময় বড় কয়েকটি টিভি নেটওয়ার্ক ঘোষণা করে বসলো– ফ্লোরিডায় জিতেছেন আল গোর। তার মানে তিনিই প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
আল গোর এবং তার পরিবার যখন এই খবর শুনছিলেন, তখন সেখানে ছিলেন ফটোগ্রাফার ক্যালি শেল। কিন্তু তার পরই আল গোরের কাছে ফোন কল আসতে লাগল তার ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের কাছ থেকে। ক্যাম্পেইন ম্যানেজার বলছিলেন– এই ফল বারবার পাল্টে যাচ্ছে। তার পর সাংবাদিকরাও বলতে শুরু করলেন, ফ্লোরিডায় অনেক বড় ঝামেলা আছে…।
ফ্লোরিডার বিভিন্ন দিক থেকে তখন যে ধরনের খবর আসছিলো, তাতে বোঝা যাচ্ছিলো, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, সেটি জানতে বেশ দেরি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট পেপার একেক রাজ্যে একেক রকম। এমনকি তাদের ভোট দেয়ার নিয়ম-কানুনও একেক জায়গায় একেক রকম।
একই রাজ্যেই হয়তো কোনো জেলায় ভোট নেয়া হচ্ছে ইলেকটোরাল মেশিনে, কোথাও ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিয়ে। কোথাও হয়তো একটা পেপারে ছিদ্র করে তারা চিহ্ণিত করছে কাকে ভোট দিচ্ছে। এটাকে বলে চ্যাড। মনে হচ্ছিলো টিভি নেটওয়ার্কগুলো যেন তাড়াহুড়ো করে আল গোরকে নির্বাচিত ঘোষণা করে দিয়েছে।
নির্বাচনের ফল নিয়ে অব্যাহতভাবে চলছিলো নানা জল্পনা। সেই সঙ্গে বিভ্রান্তি। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে সবাই তখন প্রচন্ড স্নায়ু চাপে ভুগছে।
আল গোর তখন খুব শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলেন। তিনি তখন হোটেল রুমের মেঝেতে শুয়ে পুরো বিষয়টির মানে বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
এর পর মধ্যরাতের একটু পর, টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো এবার উল্টো ফল ঘোষণা করতে লাগল, তারা বলল ফ্লোরিডায় আসলে জিতেছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ।
এ খবরে আল গোর শিবিরে যেন বিপর্যয় নেমে এলো। মনে হচ্ছিলো এটি যেন এক শবযাত্রা। সবাই যেন পাথর হয়ে গেছে। আড়াইটার সময় আল গোর একা তার স্যুইটের বেডরুমে গিয়ে বুশকে ফোন করলেন এবং পরাজয় স্বীকার করলেন। বুশকে অভিনন্দন জানালেন।
তখন সেখানে পিনপতন নীরবতা। কেউ কিছু বলছিল না। আমার মনে হয় সবাই একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনে জেতার জন্য দেড় বছর ধরে সবাই কষ্ট করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে হারতে হলো।
তার পর আল গোর যখন হার স্বীকার করে বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তার টিমের কাছে একটি বার্তা এলো। তার দলের একজন কর্মীর কাছে একটা টেক্সট মেসেজ এলো ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের কাছ থেকে। এটিতে বলা হলো– আল গোরকে যেন অনুষ্ঠান মঞ্চে যেতে দেয়া না হয়। কারণ ভোটের লড়াই এখনও শেষ হয়নি।
কারণ সে সময় প্রতিটি ভোট হাতে গুনতে রায় দেন ফ্লোরিডার সর্বোচ্চ আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্ট এই রায় উল্টে দেন। সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারকের মধ্যে পাঁচজন ভোটের প্রথম ফলকে সঠিক বলে রায় দিলেন। এতে ফ্লোরিডায় জর্জ ডব্লিউ বুশই জিতেছেন। এর ফলে ফ্লোরিডার সব কলেজ ভোট পেলেন তিনি। তার মোট কলেজ ভোট দাঁড়াল ২৭১। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যত ভোট দরকার, তার চেয়ে এক ভোট বেশি। এতে বুশ হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।