সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ গড়তে মাত্র ২২ জন মানুষ প্রয়োজন। তবে সবাই এ বিষয়ে একমত নন। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমাদের সৌরজগতের এই লাল গ্রহটিতে স্থায়ী মানবসভ্যতা তৈরির জন্য আরও বেশি মানুষ দরকার।
চলতি বছরের ১১ আগস্ট প্রি-প্রিন্ট ডেটাবেজ আরএক্সআইভিতে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধটি। গবেষকেরা এ গবেষণায় এজেন্টভিত্তিক মডেল বা এবিএম নামে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে অনুমান করেছেন মঙ্গলে উপনিবেশ গড়তে কত লোকের প্রয়োজন। প্রোগ্রামটি মূলত মানুষের ব্যক্তিত্বের ধরনের ওপর নির্ভর করে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশেকে কতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন, তা দেখানোর চেষ্টা করেছে।
মডেলে চার ধরনের মানুষের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, অ্যাগ্রিয়েবল, অর্থাৎ যেকোনো কার্যক্রমে সম্মতি জানান স্বতঃস্ফূর্তভাবে, এমন স্বভাবের মানুষ। মানে, যাঁরা খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক বা আক্রমণাত্মক নন। এরপরে রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিরা। একটু বহির্মুখী স্বভাবের।
এরপরেই আছেন প্রতিক্রিয়াশীল ঘরানার মানুষ। নিয়মিত রুটিনে পরিবর্তন এলে তাঁরা প্রচণ্ডভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। খুব কষ্ট হয় যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। আর সর্বশেষ হলো নিউরোটিক স্বভাবের মানুষ। নিউরোটিক কথাটি দিয়ে বোঝানো হয়, তাঁরা খুব ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই প্রতিক্রিয়া দেখান। এই প্রতিক্রিয়া অযৌক্তিকও হতে পারে। অর্থাৎ, তাঁরা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের হন।
গবেষকেরা দেখেছেন, কলোনি বা উপনিবেশের বেশিরভাগ মানুষ যদি অন্যদের কথায় সম্মতি জানান স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা সামাজিক স্বভাবের মানুষ হন, তাহলে মাত্র ২২ জন মানুষই একটি উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল ও আক্রমণাত্মক স্বভাবের মানুষের ক্ষেত্রে এত কম লোকের সাহায্যে উপনিবেশ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
তবে মঙ্গলে উপনিবেশ গড়তে হলে শুরুতে উপনিবেশের আকার ছোট রাখতে হবে। কারণ, সেখানে যত বেশি মানুষ থাকবে, তাঁদের জন্য তত বেশি সরঞ্জাম ও অন্য জিনিসপত্র দরকার পড়বে। এতে বাড়বে খরচ।
আগেই বলেছি, অনেকে এ মডেল মেনে নিতে পারেননি। কারণ মডেলটিতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন এ মডেল অনুযায়ী কেউ একজন উপনিবেশের কাঠামো ও অন্যান্য সরঞ্জাম (দালানকোঠা, যানবাহন ইত্যাদি) তৈরি করবে। আবার তাঁদের কাছে এমন একটি ছোট পারমাণবিক চুল্লি থাকতে হবে, যা সাত বছরের শক্তি যোগান দেবে। কিন্তু বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। একজনের ক্ষেত্রে যেমন কাঠামো ও সরঞ্জাম তৈরি করা সম্ভব নয়, তেমনি মঙ্গলে এমন কোনো পারমাণবিক চুল্লিও থাকবে না।
তা ছাড়া মডেলটি তৈরি করা হয়েছে উপনিবেশের প্রথম ২৮ বছর হিসেবে নিয়ে। দলের ১০ জন সদস্য বেঁচে থাকা পর্যন্ত এ মডেল সফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে এত কম লোকবল নিয়ে কীভাবে একটি উপনিবেশ বাস্তবে কাজ করবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে সংশয়।
ফ্রান্সের বোর্দোর আইএমএস (ইন্টিগ্রেশন ফ্রম ম্যাটেরিয়াল টু সিস্টেম) ল্যাবরেটরির নভোযানবিদ্যা গবেষক জিন-মার্ক সালোত্তি। তিনি বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহে সম্পূর্ণ কার্যকর ও স্বায়ত্তশাসিত উপনিবেশ তৈরি এবং সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ২২ জন মানুষ যথেষ্ট নয়।’ সালোত্তি নিজেও এর আগে এরকম একটি গবেষণা করেছিলেন।
তাঁর গবেষণায় উঠে এসেছে, মঙ্গলে এরকম একটি উপনিবেশ তৈরির জন্য প্রয়োজন অন্তত ১১০ জন মানুষ। তাঁর মতে, ২২ জন মানুষ সীমিত সময়ের জন্য ওই গ্রহে বাস করতে পারেন মাত্র। মানে, যতদিন তাঁদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শক্তি ও সম্পদ থাকবে, ততদিন। কিন্তু তাঁরা মঙ্গলে উপনিবেশ তৈরি করতে পারবেন না সফলভাবে।
তবে এ মডেলে চার ধরনের মানুষ বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। যদিও এক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা দেখছেন সালোত্তি। তাঁর মতে, একটি উপনিবেশের জন্য সাধারণ কোনো বিরোধ বা সংঘাতও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ওরকম একটি পরিবেশে একটি স্বায়ত্বশাসিত উপনিবেশ নির্মাণ করে তা টিকিয়ে রাখার জন্য আরও বেশি মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন।
যাতে যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে তাঁরা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এ কারণে সালোত্তি ভবিষ্যতের মিশনের জন্য অন্তত ১১০ জন মানুষের কথা বলেছেন। এর চেয়ে কম হলে মঙ্গলের শিশুরা প্রজনন নিয়ে সমস্যায় পড়বে। ফলে হ্রাস পাবে স্থিতিস্থাপকতা। কোনো শারীরিক রোগ বা ত্রুটি দেখা দিলে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।