নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ দিনের মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংকটি এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিশেষ একটি মহলকে সুবিধা দিয়ে আসা ব্যাংকটি নতুন নেতৃত্বের কারণে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে। শিগগিরই এই ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করছে নতুন পর্ষদ।
গত ২ সেপ্টেম্বর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ দিনের মাথায় ভালো খবর শোনাল ব্যাংকটি।
জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জুমবাংলাকে বলেন, ব্যাংকের পুনরুদ্ধার সম্পর্কে আমি খুবই আশাবাদী। এখন পর্যন্ত আমরা ৩৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছি। সামনে আরও আদায় হবে। মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণকারী কর্মকর্তাদের উপর দায় চাপানোর ঘোষণার দেওয়া হয়। যে কর্মকর্তারা ঋণ বিতরণ করেছে আদায় না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করার নতুন কৌশলের মাধ্যমে- ঋণ খেলাপিদের ওপর চাপ বজায় রাখা হবে।
তিনি আরও জানান, দরকার হলে আমাদের নির্বাহীরা খেলাপিদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেবেন। ফলে তাদের প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই জানতে পারবে- এসব ব্যক্তি তাদের ঋণ পরিশোধ করে না, আবার দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। এমন ঘোষণার পর কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল আসতে শুরু করেছে।
চেয়ারম্যান জানান, মাত্র দুই দিনে ২,৭০০ ক্যাশ ওয়াকফ ডিপোজিট হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকিং সেবার এই প্রোডাক্ট সম্পর্কে আগে ঠিকমতো জানতেন না ব্যাংকটির কর্মীরা। ক্যাশ ওয়াকফ একটি শরীয়াহ-ভিত্তিক আমানত, সামাজিক কল্যাণের জন্য চিরকালীন অনুদানের অর্থ যেখানে রাখা হয়। এসব আমানত থেকে যে মুনাফা আসে- তা দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ নানান রকম দাতব্য কাজের জন্য অর্থের জোগান নিশ্চিত করা যায়।
তবে এফএসআইবির প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের আমানত যেভাবে মাত্র ২০০ ঋণগ্রহীতার কাছে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগই ব্যক্ত করেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান।
এসব ঋণের বেশিরভাগই বিতরণ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, ঢাকার গুলশান ও মতিঝিল মাত্র তিনটি শাখা থেকে।
মান্নান বলেন, সারাদেশের ২০৫টি শাখা ও ১৭৫টি উপ-শাখার মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করা হলেও- এসব বিনিয়োগের অধিকাংশই চলে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছোট একদল গ্রাহকের কাছে। সম্পদ এভাবে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি অবহেলিত হয়েছে, এবং যখন অত্যন্ত দরকার ছিল তখন আর্থিক বৈচিত্র্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংকটির ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের মোট আমানতের পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, এরমধ্যে ১৩ হাজার ৫০৩ কোটি টাকাই এসেছে অন্যান্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে। ব্যাংকের ৬৩ গ্রাহকের কাছে বিনিয়োগ করা হয়েছিল মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি, এই ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এমনকী সাতজন গ্রাহক ব্যাংকের মোট রেগুলেটরি ইক্যুইটির ১৫ শতাংশের বেশি বা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হলে, গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এরপর বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের উদ্যোগের মধ্যে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের এমন অনেক তথ্য জানা যায়। অন্তর্বর্তী সরকার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর দ্রুতই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাত ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়।
এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও ছিল। আগে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ছিল বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদের হাতে। শুধুমাত্র কাগজে কলমেই অস্তিত্ব আছে এমন সব কোম্পানির নামে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে, তারমধ্যে এস আলম ছিল অন্যতম। সাত ব্যাংকের ছয়টিতেই মালিকানা ছিল মাসুদের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ২ হাজার ৬৯০ কোটি, যা মোট ঋণের ৪.৫৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, এটা খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত খেলাপি আরও বেশি। তবে আদায় প্রক্রিয়া চলমান ও ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে অন্য ব্যাংক থেকে কোন প্রকার ধার দেনা না করে খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে এই ব্যাংকটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।