জুমবাংলা ডেস্ক : অভাবের তাড়নায় জিদের বশে দেশ ছেড়েছিলেন সাইফুল্লাহ গাজী। জিদ মিটতেই দেশে ফিরে ঢাকায় গার্মেন্টেসে শুরু করেন শ্রমিকের কাজ। কাজের মজুরিতে অসন্তুষ্ট ছিলেন সাইফুল্লাহ। মজুরি থেকে অবশিষ্ট থাকা ৬২০ টাকায় অ্যাকুরিয়াম মাছের চাষ শুরু করেন। আর সেই মাছ চাষ তাকে আজ বানিয়েছে কোটিপতি।
এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা অ্যাকুরিয়ার মাছ সৌখিন ব্যক্তিদের বাসা-বাড়িতে শোভা পেত। কিন্তু উদ্যোমী সাইফুল্লাহ চেষ্টায় দেশ থেকে উৎপাদিত মাছ এখন সৌখিনদের বাসা-বাড়িতে যাচ্ছে। এখন দেড় কোটি টাকার মূলধন খাটিয়ে ব্যবসা করছেন সাইফুল্লাহ।
সাইফুল্লাহ গাজী। যিনি সাতক্ষীরার কলারোয়ার বজ্রবকশা গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে ২১টি পুকুরে বিভিন্ন ধরনের অ্যাকুরিয়ামের মাছ চাষ করছেন তিনি। বিশাল মূলধন খাটানোর পাশপাশি ৫০ জন বেকারের কর্মসংস্থান করেছেন সাইফুল্লাহ। তার পুকুরে বাহারি রঙের মাছে সমারোহ দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকালে পাত্রে শব্দ করে মাছকে খাওয়ার দাওয়াত দেন সাইফুল্লাহ। শব্দ শুনে পুকুরের এক কিনারে জমা হয় সব রঙিন মাছ। এরপর খাবার ছিটিয়ে দিলেই নিমিষেই খাবার খেয়ে তৃপ্ত হয় মাছগুলো। সাইফুলের ডাক ও মাছেদের সাড়া দেয়ার এক অপূর্ব দৃশ্য দেখে অবাক স্থানীয়রা। তার পুকুরে রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের অ্যাকুরিয়ার মাছ। এর মধ্যে রয়েছে কমেট লাল, কৈ কাপ গোল্ড ফিস, ওরেন্টা গোল্ড, ব্যাল্ক মোর, মলি, প্লাটি।
সফল উদ্যোক্তা সাইফুল্লাহ গাজী বলেন, ১৯৯৭ সালে অভাবের কারণে জেদের বশে প্রতিবেশী দেশ ভারতে কাজে যাই। সেখানে টেক্সটাইল মিলে কাজ করার পাশাপাশি একটি গ্রামীণ এলাকায় যাই। সেখানে বেশ কয়েকটি পুকুরে নানা রঙের মাছ চাষ দেখতে পাই। এরপর জিদ মিটে গেলে দেশে ফিরে আসি।
অভাবের তাড়নায় ১৯৯৯ সালে আবারো বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেসে কাজ শুরু করি। কিন্তু পর্যাপ্ত আয় না থাকায় সন্তুষ্টি মেলেনি। তখন মিরপুর-১৩ তে একটি অ্যাকুরিয়ামের দোকান দেখি। ভারত থেকে সৃষ্ট আকাঙ্ক্ষা আর মিরপুরের দোকান দেখে অ্যাকুরিয়াম মাছ চাষের প্রতি প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়।
তিনি আরো বলেন, আগ্রহ থাকলেও মূলধন ছিল না। অবশেষে মাসের বেতনের সব টাকা খরচ করে অবশিষ্ট ৬২০ টাকা ছিল। সেই টাকায় কয়েকটি মাছ নিয়ে বাড়িতে রওনা হই। বাড়িতে অ্যাকুরিয়ামের মাছগুলোকে এনে কলসে পালন করি। এক সময় মাছগুলো ডিম দেয়। কিন্তু পুরুষ মাছের অভাবে ডিমগুলো থেকে বাচ্চা উৎপন্ন হচ্ছিল না। এভাবেই অ্যাকুরিয়ারম মাছ চাষের শুরু।
সাইফুল্লাহ বলেন, প্রথমে ১০ রকমের মাছ আনলেও ৯ ধরনের মাছকেই বাঁচানো যেত না। তবে পাঁচ বছরের অক্লান্ত সাধনায় ৯ ধরনের মাছ প্রস্তুত করতে সক্ষম হই। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৬২০ টাকার মূলধন এখন দেড় কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২১টি পুকুরে চাষ করা অ্যাকুরিয়ামের পিছনে ৫০ জন পরিশ্রম করছেন।
তিনি বলেন, নিজের বেকারত্ব থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো পাঁচজনের বেকারত্ব দূর করতেই চেষ্টা করছি। এখন আমার চাষ করা অ্যাকুরিয়াম মাছ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ রফতানি করার ইচ্ছা আছে। এতে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশ লাভবান হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।