জুমবাংলা ডেস্ক: রোগী প্রতি বছরে মাত্র ৯ ডলার খরচ করেই দেশব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্টঅ্যাটাক ঝুঁকির প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ, যা প্রতিরোধযোগ্য।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভস’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আজ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) প্রোগ্রাম, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস।
রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রাক্তন পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক , স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয় , বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। অত্যন্ত সফল এই প্রাথমিক প্রকল্পটি আরো সম্প্রসারণ করা হলে দেশে স্বল্প খরচেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল হওয়ার মত ব্যয়বহুল রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে অসংখ্য জীবন বাঁচানো যাবে।
টম ফ্রিইডেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপজনিত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অসংখ্য জীবন বাঁচানোসহ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সাধারণ ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৯ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎ্সা সেবা গ্রহণ করছেন, এবং ১৪ শতাংশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন।
অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ত্রিশ শতাংশই ঘটে হৃদরোগের কারণে। অথচ স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয় অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য। দেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পাইলট প্রোগ্রামটির মাধ্যমে দেখা গেছে, কিভাবে অল্প খরচে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী এমনকি জাতীয় পর্যায়েও উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে বলা হয় , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ পরিচালনায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এরই মধ্যে দেশের ৫১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাটর্স টেকনিক্যাল প্যাকেজ-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১ লাখ রোগীর মধ্যে ৫৮ শতাংশই উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বার্ষিক বাস্তবায়ন খরচ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হার্টস কস্টিং টুল নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এই গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, ডাক্তার এবং এই সেবার সাথে জড়িত অন্যান্যদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি (টাস্ক-শেয়ারিং) নিশ্চিত করা, টাস্ক-শেয়ারিং এর মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করা, এবং গুণগত মান ঠিক রেখে প্রতি ইউনিট ওষুধের দাম আরো কমিয়ে আনা গেলে হার্টস প্যাকেজ বাস্তবায়ন আরো বেশি সাশ্রয়ী হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা আরো বাড়ানো হলে বিপুল অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব।
রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিটি ইতিমধ্যে টাস্ক-শেয়ারিং এবং টিম-ভিত্তিক সেবা প্রদানের নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করে সফলতার মুখ দেখছে বলে মন্তব্য করেন অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন। ৎ
তিনি বলেন, দুই বছরের ব্যবধানে ১ লাখেরও বেশি রোগী নিবন্ধন করেছে – অর্থাৎ মাসে গড়ে চার হাজারেরও বেশি নতুন রোগী নিবন্ধিত হয়েছেন। সেবা গ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছেন। সাফল্যের এই হার জাতীয় গড়ের প্রায় চারগুণ।
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের এই কর্মসূচিটি বিশ্বে প্রচলিত সর্বোত্তম পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করে সাজানো হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, সেবা প্রদান এবং সেবা গ্রহণের ধারবাহিকতা ঠিক রাখতে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসায় সহজ ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল এর সাথে সুনির্দিষ্ট ওষুধ, প্রয়োগ মাত্রা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, টিম ভিত্তিক সেবা প্রদান এবং টাস্ক শেয়ারিং, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং ভাল মানের ওষুধ সরবরাহ চালু রাখাসহ রোগী-কেন্দ্রিক সেবা প্রদান যেমন, সহজে গ্রহণ করা যায় এমন ওষুধের ব্যবস্থা, বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও নিয়মিত ফলো-আপ করা এবং কার্যকরী স্বাস্থ্য তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের খোঁজ রাখা ও সেবার মানের দ্র্রুত উন্নতি সাধন করা।
বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, শারীরিক পরিশ্রম অত্যন্ত কম এমন জীবনাচরণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ, এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের বোঝা আগামী বছরগুলোতে বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন বক্তারা। বাংলাদেশে এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করা হলে অল্প ব্যয়ে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।