জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার নন্দীগ্রামের ইসলামপুর ভুস্কুর আলিয়া আলিম মাদ্রাসার অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, জামিন নিয়ে ফেরার পথে বাস থামিয়ে ছুরিকাঘাত, মামলা ও পাল্টা মামলার ঘটনা ঘটেছে।
আহতদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নন্দীগ্রাম থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও এজাহারসূত্র জানায়, সম্প্রতি নন্দীগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর ভুস্কুর আলিয়া আলিম মাদ্রাসায় অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় ভাটগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাজমুস সাহাদত সোহেলের পক্ষে ডিও লেটার দেন।
অন্যদিকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক এমপি ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তারেক হোসেনের পক্ষে ডিও লেটার দেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন গত ২ এপ্রিল মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দু’জনের নাম প্রেরণ করেন।
গত ১৪ এপ্রিল মাদ্রাসা বোর্ড অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে বিএনপির এমপির সুপারিশকৃত নাজমুস সাহাদত সোহেলের নাম অনুমোদন করে।
এদিকে ২৬ মে দুপুর ১টার দিকে অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নাজমুস সাহাদত সোহেল মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে পাশের একটি দোকানে যান। এ সময় সভাপতি হতে বঞ্চিত তারেক হোসেন ও তার লোকজন ওই দু’জনকে অবরুদ্ধ এবং মারপিট করেন।
খবর পেয়ে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় তারেক হোসেনের ভাই রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল বাছেদকে গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ নন্দীগ্রাম থানায় তারেক হোসেনসহ ছয়জনের নামে মামলা করেন।
তারেক হোসেন এ হামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি কমিটির ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। মারপিট বা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সাজানো নাটক ও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
নন্দীগ্রাম উপজেলার ভুস্কুর ইসলামপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা তারেক হোসেন অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর ডিও লেটার অবজ্ঞা ও গোপন করে বিএনপির এমপির ডিও লেটার শিক্ষা বোর্ডে পাঠালে তিনি সভাপতি হতে বঞ্চিত হন। সভাপতি হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সোহেল।
গত ২৭ মে তিনিসহ তার ভাই ভাটগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের এক নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মনির হোসেন, অপর ভাই শিক্ষক আবদুল বাছেদ প্রমুখ বগুড়ার আদালতে হাজির হয়ে ওই মামলায় জামিন লাভ করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বিএনপি নেতা নাজমুস সাহাদত সোহেল, একরাম, মালেক, সোহেল, শামিম প্রমুখ তাদের সকাল থেকেই অনুসরণ করছিলেন।
কলোনি এলাকার ক্লিনিকে গেলেও সেখানে তাদের দেখা যায়। কিন্তু তাদের ওপর হামলা হবে তা কখনও ভাবতে পারেননি।
সন্ধ্যার দিকে তারা বাড়ি ফিরতে হাড্ডিপট্টির থানা বাসস্ট্যান্ড থেকে হাটকড়ইগামী এসএস খান পরিবহণে ওঠেন। বাসটি শহরের জামিলনগর এলাকায় পৌঁছলে অধ্যক্ষ ও সভাপতির নেতৃত্বে ১০-১২ জন বাসটি থামায়। তারা চালকের কাছ থেকে বাসের চাবি কেড়ে নেয়। প্রকাশ্যে তাদের দুই ভাইকে ছুরিকাঘাত করে।
এরপর চালককে চাবি দিয়ে চলে যায়। বাসচালক রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের দু’ভাইকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছুরির আঘাতে মনিরের বাম হাতের একটি আঙুল প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে তিনি (তারেক) বগুড়া সদর থানায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, অবৈধ সভাপতি বিএনপি নেতা নাজমুস সাহাদত সোহেলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দিয়েছেন। এরপর থেকে আসামিরা আত্মগোপন করেছেন।
এদিকে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, জামিন নিয়ে ফেরার পথে বাস থামিয়ে ছুরিকাঘাত, মামলা ও পাল্টা মামলার ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, বাস থামিয়ে দুই যাত্রীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে নন্দীগ্রাম থানা এলাকায় অভিযান চলছে।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বগুড়ায় বাস থামিয়ে হামলার ঘটনায় আহত দুই ভাই বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একটি মামলার আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। অন্য মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।