শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা: কত এবং কীভাবে প্রদান?
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা হিসেবে নির্ধারিত অনুপাতে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। শিক্ষকরা তাঁদের মূল বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাবেন। এই নিয়ম শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ও সরকারি নীতিমালার ভিত্তিতে প্রণীত।
মূলত, ঈদের আগে এই অর্থ সহায়তা অনেক পরিবারে আর্থিক স্বস্তি এনে দেয়। শিক্ষকরা তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। অনেক শিক্ষক বলেন, এই উৎসব ভাতা না থাকলে ঈদের বাজার বা পরিবারকে নিয়ে উদযাপন করাটাই হতো কঠিন। বিশেষ করে যারা একক উপার্জনকারী হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এই ভাতা মানে একরাশ স্বস্তি।
Table of Contents
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অর্থ শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হচ্ছে না, বরং অনুদান বিতরণকারী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে উত্তোলনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অগ্রণী, রূপালী, জনতা ও সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলিতে চেক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বেতনভুক্ত (এমপিও) শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক ছাড়: ব্যাংক ও সময়সূচি
মার্চ মাসের এমপিওভুক্ত বেতনভাতার চেকও একযোগে ছাড় করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এ চেকগুলো অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় অফিসে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২৩ মার্চের পর থেকে নির্ধারিত ব্যাংক থেকে এ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রতিমাসে সরকারি অংশের বেতন পেয়ে থাকেন। এই বেতন নির্ধারিত তারিখে না পেলে তারা আর্থিক সংকটে পড়েন। তবে এবারে সময়মতো চেক ছাড় করায় শিক্ষকসমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
একজন শিক্ষক বলেন, “আমরা প্রতি মাসেই বেতনের জন্য চিন্তিত থাকি। কিন্তু এবারের মতো যদি নিয়মিত বেতন দেওয়া যায়, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারবো।” এ ধরণের ব্যবস্থাপনা শিক্ষকদের পেশাগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।
উৎসব ভাতা উত্তোলনের নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষকদের উৎসব ভাতা উত্তোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৩ মার্চ ২০২৫ তারিখের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে চেক উত্তোলন করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চেক গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনাপত্তিপত্র, শিক্ষক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সঙ্গে আনতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষকরা একাধিকবার ব্যাংকে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময় এবং প্রক্রিয়া জানিয়ে দেওয়ায় তাঁরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে পারছেন। এতে সময় বাঁচবে এবং কাজের গতিশীলতাও বাড়বে।
অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বোনাস পরিস্থিতি
এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ছাড়ের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ জন স্কুল শিক্ষক ও ৮৪ হাজার ২৫ জন কলেজ শিক্ষকের উৎসব ভাতার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মাউশি জানিয়েছে, সম্ভাব্য তারিখ অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবার এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক ছাড় করা হতে পারে। যদিও এখনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তা কার্যকর হবে।
শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
এই উদ্যোগ শিক্ষক সমাজে ব্যাপক স্বস্তি ও সন্তোষ এনেছে। শিক্ষকরা বলছেন, নিয়মিত বেতন ও উৎসব ভাতা সময়মতো দিলে তাঁদের পেশাদার জীবন আরও সহজ হয়। একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “শিক্ষকতা হলো একটা আদর্শভিত্তিক পেশা। আমরা কোটি কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য কাজ করি। আমাদের নিজের পরিবার নিয়েও তো ভাবতে হয়। এই উৎসব ভাতা যেন নিয়মিত হয়।”
তাঁরা আরও আশা করছেন, ভবিষ্যতে উৎসব ভাতার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে এবং চেক ছাড়ের প্রক্রিয়া আরও সহজ ও ডিজিটাল হবে।
প্রশাসনের বক্তব্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের সময়মতো ভাতা এবং বেতন প্রদান নিশ্চিত করতে তাঁরা নিয়মিত কাজ করছেন। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই শিক্ষকরা যেন কোনোরকম হয়রানি ছাড়াই তাঁদের প্রাপ্য পেতে পারেন। এজন্য আগামীতে ব্যাংকিং সিস্টেমে আরও স্বচ্ছতা এবং স্বয়ংক্রিয়তা আনার পরিকল্পনা রয়েছে।”
মাদ্রাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা ও মার্চ মাসের এমপিও চেক ছাড়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসন একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়মিত বেতন ও উৎসব ভাতা প্রাপ্তির মাধ্যমে শিক্ষকরা যেমন আর্থিক স্বস্তি পাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থাও লাভবান হচ্ছে। একজন শিক্ষক শুধু পাঠদানের মাধ্যমেই নয়, সমাজের উন্নয়নের মূলে কাজ করেন। তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করলেই শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।