সাব্বির নেওয়াজ ও বাহরাম খান : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করতে মাধ্যমিক স্তরে দিনে আরও একটি করে ক্লাস বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে প্রতিদিন সাতটি ক্লাস নেওয়া হয়। শনিবার ছুটি থাকায় বাকি পাঁচ দিন প্রতিদিন অন্তত একটি ক্লাস বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, শনিবারের বাদ যাওয়া ক্লাসগুলো সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিনে কীভাবে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবছি। প্রয়োজনে প্রতিদিন একটি ক্লাস বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন আটটি ক্লাস নেওয়া হবে। এ নিয়ে আমরা শিগগির মিটিংয়ে বসব। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, সে পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমান সময়সূচি ও ক্লাস রুটিনই বহাল থাকবে। মহাপরিচালক বলেন, বেসরকারি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই শনিবার বন্ধ থাকত। এখন সরকারি স্কুল-কলেজগুলো তার সঙ্গে যুক্ত হবে।
এদিকে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে আজ বুধবার থেকে নতুন চালু হওয়া অফিস সময় চাকরিজীবী মা-বাবাদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সরকারি অফিস সময়ের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সমন্বয় না করা হলে এ সমস্যা যানজটেও পড়বে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সময় নির্ধারণ বা সমন্বয়ের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। আজ বুধবার থেকে সেটা কার্যকর হচ্ছে। সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে এর ভালো-মন্দ নিয়েও আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার। তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রশ্ন তুলে তুষার লিখেছেন, ‘সাতটার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে আটটায় বাবা-মা ছোট বাচ্চাকে স্কুলে দেবে, নাকি অফিসে যাবে?’
সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাবা ও মা উভয়ে চাকরি করেন, এমন দম্পতিদের জন্য নতুন সময়ের অফিসে সমন্বয় করা কঠিন হবে। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ একটু আগে, কেউ একটু পরে বেরিয়ে সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজটি সারেন তাঁরা; কেউ বা সন্তানদের স্কুলে দিয়ে অফিসে ঢুকেন। পরে কেউ সন্তানকে বাসায় নেওয়ার কাজটি করেন।
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভুঁইয়া বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত টিফিনের আগে তিন পিরিয়ড ও টিফিনের পরে চার পিরিয়ড ক্লাস নেওয়া হয়। আবার অনেক বিদ্যালয়ে ডাবল শিফটও চালু আছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা) আজমল আহমেদ আজিম জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে সকাল পৌনে ৭টা থেকে প্রভাতি শাখার ক্লাস শুরু হয়ে চলে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। পরে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলে দিবা শাখার ক্লাস। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিকেল সোয়া ৫টার পরে কি আরও একটি পিরিয়ড বাড়ানো সম্ভব আদৌ?
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সরকারের যে তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তারা কেউই কিন্ডারগার্টেনগুলোর বিষয়ে কিছু বলেনি। সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। যেহেতু আমাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই, তাই আমরা শনিবার খোলা রাখতেও পারি। শিগগির এ বিষয়ে বসে সভা করে আমরা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করব। তিনি বলেন, করোনার দুই বছরে পড়াশোনার যে অপরিমেয় ক্ষতিসাধিত হয়েছে, তা পূরণকল্পে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি এক দিন বাড়িয়ে দিল।
অন্যদিকে, স্কুলে সন্তানদের পৌঁছে দেওয়া নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে চাকরিজীবী দম্পতিদের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এ বিষয়ে বলেন, সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাঁদের স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকরি করেন। সকাল ৮টার মধ্যে বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তাঁরা অফিসে ছোটেন। পরে গাড়ি দিয়ে বাচ্চাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় বা কারও বাসায় লোক থাকলে তাঁরা নিয়ে আসেন। এখন সকালে অফিসে আসার প্রস্তুতি নিতেই সময় শেষ হয়ে যাবে। বাচ্চাকে কীভাবে স্কুলে দেবেন তাঁরা? আমি নিজেও এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি।
শুধু সরকারি চাকরিজীবী নন; সমস্যা দেখছেন বেসরকারি চাকরিজীবীরাও। সুমন আহমেদ থাকেন ধানমন্ডিতে। বেসরকারি চাকরি করলেও তাঁর কাজ সরকারি অফিসে। এক সন্তানের জনক সুমনের স্ত্রী সকাল ৭টায় কাজে বের হয়ে বাসায় ফেরেন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। এই সময়টুকু সুমন বাসায় থেকে বিকেলে নিজের কাজে বের হন। দুপুর ১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিসে কাজ করে এরপর নিজের অফিসে ঢোকেন। এখন অফিস সময় ৩টায় শেষ হয়ে যাবে। তাই চিন্তায় পড়েছেন, কীভাবে সমন্বয় করবেন! এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যেভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে, তেমনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল। এভাবে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নিশ্চয় সরকার চিন্তা করেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্তরই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব আছে। যদি বিষয়টি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে, তাহলে সংশোধন করার সুযোগ আছে। এখন নতুন একটা সিদ্ধান্ত এসেছে। দেখা যাক, কী হয়।
আর মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত আগে বাস্তবায়ন তো শুরু হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফিডব্যাক পাওয়া যাবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।- সমকাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।