জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে হারান বেশ কিছু সমর্থক। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চুপ থেকে বিশাল জনগোষ্ঠির কাছে বনে যান ভিলেন। অবশেষে এ নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
দেশের অনলাইন ভিক্তিক গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে ঢাকাতে থাকলেও মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঘটে যাওয়া প্রাণহানি-রক্তপাত নিয়ে কথা বলতে না পারার কষ্ট নিয়ে মাশরাফী বলেন, ‘এই কষ্ট হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সবসময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সবসময়ই থেকে যাবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনও যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সবসময়ই থাকবে।’
কেন চুপ ছিলেন এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে। কথা যদি বলতেই হতো তখন… কোটা সংস্করারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেইসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি। তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’
সে সময় কথা বলতে বা স্ট্যাটাস দিতে কোনো বাধা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘কাউকে দোষ দেব না। দায় আমারই। বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফীর প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথাপেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কটা-দুটি স্ট্যাটাস (ফেইসবুকে) দিলে হয়তো গা বাঁচাতে পারতাম। তার পরও অনেকে সমালোচনা করতেন, অনেকে খুশি হতেন। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আরও বড় পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেছি। সেটিও পারিনি। কাজেই ব্যর্থ হয়েছি অবশ্যই।’
নড়াইলের বাড়ি পোড়ানো বিষয়ে মাশরাফী বলেন, ‘হয়তো একটা ‘মব’-এর মতো হয়েছে এবং হুট করেই উত্তেজিত কিছু লোক এটা করেছে। কারণ, নড়াইলের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু আমি করিনি বলেই মনে করি। কেন তারা বাড়িতে হামলা করল, এই কারণ আমিও খুঁজেছি এবং খুঁজছি। নিজেও জানি না, কেন আমার বাড়ি পোড়ানো হলো।’
রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল কি না এ প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফী বলেন, ‘রাজনীতিতে এসে ভুল করেছি, এটা তাই বলব না। ভুল করে থাকলে হয়তো নিজেরই ক্ষতি করেছি। তবে আমার ভেতরে কোনো খেদ কখনও কাজ করবে না। কারণ, নিজের চিন্তাটা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল।’
ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আমি তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি না। বিপিএল খেলি আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলি। ভেবেছিলাম, আর এক মৌসুম খেলে হয়তো বাদ দেব। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আদৌ বিপিএল হয় কি না, বা ঢাকা লিগ হয় কি না, কে জানে। সময় হলে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’
ক্রিকেট বোর্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে মাশরাফী বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি, আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট বোর্ডে থাকা বা এরকম কোনো দায়িত্ব আমার প্রাপ্য নয়। আমি দাবিও করতে পারি না। হ্যাঁ, ক্রিকেট আমার রক্তে আছে। কেউ কখনও সহায়তা চাইলে অবশ্যই পাশে থাকব। কিন্তু বোর্ডে থাকার বাস্তবতা এই মুহূর্তে আমার নেই। ডিজার্ভও করি না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।