সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : আখ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। বেশি চাহিদার পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এবছর অধিক লাভের মুখ দেখছে আখ চাষীরা।
মানিকগঞ্জে সুইং, বোম্বে, গেন্ডারী, কুশুল চানপুরা, নলঠেঙ্গা এবং সাতাইশ জাতের আখ বেশি চাষ করা হয়। আখের চারার ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে চাষীরা সরিষা, মরিচসহ অন্যান্যও ফসলও চাষ করে থাকে। দুই-তিন মাসে এসব ফসল উঠলেও আখ পরিপক্ক হতে সময় লাগে আরো কয়েক মাস। এভাবে একসাথে একাধিক ফসল ফলিয়ে সাবলম্বী হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবছর প্রায় ১২৮০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও চলে যায় এ অঞ্চলের আখ। পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।
আখ বিক্রির হাট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে মানিকগঞ্জের তরা হাট। এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আখ বিক্রি হয়। ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে আখের বাজার। ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আখ চাষীরা তাদের উৎপাদিত আখ এখানে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য।
জেলায় চাষকৃত আখের ৬০ শতাংশ আখই যায় ঢাকার বাজারে। প্রতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই আখ সরবরাহ করা হয়। আর আখের সবচেয়ে বড় বাজার বসে তরা হাটে। এখানে সপ্তাহে দুই দিন আখ কেনাবেচা হয়। এ হাট থেকেই বড় বড় ট্রাক বোঝাই করে আখ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
জানা গেছে, জেলার খাগড়াকুড়ি, ঘিওর, তরা, কুটাই, উত্তর তরা, মাইজখাড়া, লঙ্গনপুর, দোলাপাড়া, পাথরাইল, নকিব বাড়ি, গিলন্ড, বাগজান, মূলজান, করচাবাধা, ঘোস্তা, বালিয়াবাধা, হেলাচিয়া, নারিকটি, চানপুর, গোপালপুর, বাংলাদেশ হাট, তিল্লি, ডাউটিয়া, আলীনগর, বায়রা, জামালপুর, চর জামালপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় অধিক পরিমাণ আখ চাষ হয়ে থাকে।
আখের ব্যাপারী রাশেদ মিয়া জানান, তরা হাটে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। এই দুই দিনে কমপক্ষে ১০ ট্রাক আখ চালান হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। এই হাটে আখ বিক্রি হয় শ’ হিসাবে। আখের প্রকার ও ভালোমন্দ অনুযায়ী প্রতিটির দাম হয় ১০ থেকে ৩০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি ১০০ আখ বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।
আখ কিনতে আসা ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকার আব্দুল গনি বলেন, অপেক্ষাকৃত ভালো মানের, পরিবহনের সহজলভ্যতা এবং কম দাম হওয়ায় তারা এই হাট থেকেই আখ কেনেন। পরিবহন ভাড়া যোগ করে ঢাকায় তারা প্রতিটি আখ আকার ভেদে বিক্রি করেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
গিলন্ড এলাকার কৃষক চান মিয়া সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তিন বিঘা জমিতে চাষ করে তিনি পেয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার আখ। খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকার ওপরে।
সিংগাইর উপজেলার বায়রা এলাকার কাদের মিয়া জানান, আখের ফলন তুলতে সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। তবে আখ খেতে থাকতেই সাথি ফসল হিসেবে বেশ কিছু সবজির চাষ করা যায়। আখের জন্য যে সার দেওয়া হয় সেই সারেই সবজি চাষ হয় যায়।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজাহান আলী বিশ্বাস জানান, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকুলে থাকায় মানিকগঞ্জের সদর উপজেলাসহ সিংগাইর, ঘিওর, সাটুরিয়া, হরিরামপুর উপজেলায় উৎপাদিত বেশির ভাগ আখে গুড় তৈরি হয়। জেলার আখ চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা অনেক খুশি। আগামীতে আখ চাষে কৃষকের আগ্রহ আরো বাড়বে বলে আশা করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।