-
সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার আইন অমান্য করে মানিকগঞ্জে ভাড়ায় চলছে নিকাহ রেজিস্ট্রারের বহি। ভাড়ায় বহি নিয়ে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চললেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলার একাধিক নিকাহ রেজিস্ট্রার অধিক মুনাফার লোভে আইন অমান্য করে মানিকগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গন ঘিরে কিছু সংখ্যক অসাধু আইনজীবি ও আইনজীবি সহকারির মাধ্যমে ভূয়া নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি কার্যক্রমের অবৈধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ আবার নিকাহ রেজিস্ট্রারের সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর নিজেই নিকাহ এবং তালাক রেজিস্ট্রির কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আব্দুস সালাম, কৃষ্ণপুরের শফিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, ঘিওরের বানিয়াজুরী ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আল আমীন মোহাম্মদ হাসান, সিংগাইরের বলধারা ইউনিয়নের আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আরো অনেক কাজী নিজ নিজ এলাকায় নিকাহ রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে থাকলেও মহৎ এ পেশাকে পুঁজি করে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার বিধি অনুযায়ী- সহকারি নিয়োগ, নিজ এলাকার বাইরে নিকাহ রেজিস্ট্রি, রেজিস্ট্রার বহি ভাড়া দেওয়ার বিধান না থাকলেও এসব কাজীরা আইন অমান্য করে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদের মধ্যে বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আব্দুস সালাম নিজ ইউনিয়ন ছেড়ে পৌর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে কিছু আইনজীবি ও আইনজীবি সহকারিদের মাধ্যমে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার করছে। কৃষ্ণপুরের শফিকুল ইসলামের বহি ভাড়ায় নিয়ে মামুন বেপারী নামের এক ভূয়া কাজী আদালত চত্ত্বরে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাজ করছে। একই ইউনিয়নের আরেক কাজী নুরুল ইসলামের বহি নিয়ে কাজ করছে বারাহিরচর মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক, ঘিওরের বানিয়াজুরী ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আল আমীন মোহাম্মদ হাসানের পরিবর্তে তার ছেলে নিজ এরিয়ার বাইরে গিয়ে কাজ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিংগাইরের বলধারা ইউনিয়নের আবদুল্লাহ আল মামুন অবৈধভাবে স্থানীয় বাসিন্দা মোহনকে সহকারি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে জেলার অধিকাংশ কাজী আইন অমান্য করে অবৈধভাবে সহকারি নিয়োগ দিয়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার আইন অনুযায়ী- নিকাহ রেজিস্ট্রারের পূর্বে বর ও কনের বিবাহের জন্য আইনগত বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জম্ম নিবন্ধন সনদ বা অন্যান্য সনদ যাচাই না করেই বিবাহ নিবন্ধন করেন তারা। এছাড়া, নিকাহ রেজিস্ট্রার করে ফি গ্রহণ বাবদ রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পে সহিযুক্ত রসিদ প্রদান করার নিয়ম থাকলেও মানা হচ্ছে না এসব বিধি বিধান।
এ বিষয়ে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, মামুন বেপারী আমার বই নিয়ে মাঝে মাঝে কাজ করে। কোর্ট এলাকায় তো অনেকেই কাজীর কাজ করে। কার কথা বলবো? কেউই ভালো না।
বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের কাজী আব্দুস সালাম বলেন, আইন অমান্য করে আমি আদালত চত্ত্বরে কিছু কাজ করি, তবে কাজী মনিরুজ্জামান আদালত চত্ত্বরে একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য আমার বিরুদ্ধে দুর্নাম করছেন। আমি স্ত্রী সন্তানের জন্য পৌর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জেলা নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, কিছু অসৎ কাজীর কারণে পুরো কাজী সমাজের দুর্নাম হচ্ছে। ইসলামি শরিয়ত অমান্য করে এসব কাজীরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রি করছে। আমি এর ঘোর বিরোধী। আমি এদের সবসময়ই বলি, অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রি করলে তোমাদের জাহান্নামেও জায়গা হবে না।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার জেড এম ইমরান আলী বলেন, নিকাহ রেজিস্ট্রারের বহি ভাড়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে শুনেছি এসব বালাম বই ঢাকার নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া যায়। কেউ যদি এদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সত্যি বলতে ইমামদের কাছ থেকে সমাজ কিছু শিখতে চায়, সেই ইমামরা যদি অনিয়ম করে তাহলে কিছু করার নেই। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।