জুমবাংলা ডেস্ক: টাঙ্গাইলের কলেজ ছাত্রী হামিদা আক্তারের পালন করা ৪৫ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় ‘মানিক’ এবারের ঈদ উল আজহায় বিক্রি হয়নি। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ঢাকার গাবতলী হাটে অপেক্ষার পরও বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখে আকৃষ্ট হয়নি ক্রেতারা। এ নিয়ে তিন দফায় হাটে উঠলেও কোনো বারই বিক্রি হয়নি মানিক।
মানিককে বিক্রি করতে না পারলেও হতাশ নন হামিদা। স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবার ছোট পরিসরে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দুগ্ধ খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে মানিকেরও দেখাশুনা করতে চান তিনি।
মানিক লম্বায় প্রায় ১০ ফুট। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। ওজন ৪৫ মণ। কালো ও সাদা রঙের এই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির দাম এবারের কোরবানি পশুর হাটে এই ষাঁড়ের দাম হাঁকা হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা।
হামিদা আক্তার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদের মেয়ে। তিনি টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাসে অর্নাস পাস করেছেন। গরুর বড় খামারি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেখাপড়ার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীসহ ষাঁড় লালন পালন করেছেন তিনি।
হামিদা বলেন, ‘বড়লোকদের সঙ্গে বড় বড় খামারিদের সম্পর্ক। ঈদের ১৫দিন আবার কোন খামারি এক মাসে আগেই গরু বিক্রি করেছেন। আমাদের মত স্বপ্ন দেখা গরিব মানুষের জন্য ধনীরা নন। ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আমাকে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর দেন। আমি ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করি, কিন্তু তিনি না দেখেই আমার ষাঁড়টির দাম বলেন মাত্র তিন লাখ টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানিককে বিক্রির জন্য বাড়িতেই অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিবেশী আর আত্মীয়দের পরামর্শে বাধ্য হয়ে ৭ জুলাই রাতে মানিক আর সাড়ে ৭ মণ ওজনের আমার খামারের আরও একটি ষাঁড় নিয়ে রাজধানী ঢাকার গাবতলী হাটে যায়। গত বছর করোনার কারণে গাবতলী হাটে মানিকের দাম উঠেছিল ৫ লাখ টাকা। এবার কেউ দামই করেননি। এর আগের বছর মানিককে নেয়া হয়েছিল পুরান ঢাকার ঢলপুর বাজারে। সেখানে মানিকের ক্রেতা পাওয়া যায়নি।’
হামিদা বলেন, ‘হাটে ষাঁড় দুটি দেখভালের জন্য আমার সঙ্গে মামাসহ তিনজন কামলা ছিল। দিনে জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে দেওয়ার চুক্তিতে নেওয়া হয় ওই তিনজনকে।’
হামিদা বলেন, ‘হাটের জায়গা ভাড়া নেওয়া এক ব্যবসায়ীর সব গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তিনি আমাকে ষাঁড় দুটি রাখার ব্যবস্থা করে দেন। এরপরও গাবতলী হাটের লোকজন এসে জায়গার টাকা দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ী নিজের গরু বলে প্রতিবাদ করার পরও দুই গরু বাবদ ২ হাজার টাকা নিয়েছেন হাটের ইজারাদাররা।’
হামিদা বলেন, হাটে উঠানোর চারদিনেও বড় গরু কেনার ক্রেতা পাইনি। কেউ মানিকের দামও করেননি। তবে সাত মণ ওজনের যে ষাঁড়টি ছিল, সেটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। হাটে ক্রেতা না থাকায় ঈদের দিন সকালে মানিককে নিয়ে বাড়ি চলে আসি।’
খরচ প্রসঙ্গে হামিদা বলেন, হাটে যাতায়াত বাবদ গাড়ি ভাড়া ১০ হাজার, ইজারা বাবদ ২ হাজার, চারদিনের কামলা বেতন ২ হাজার ৮০০ টাকাসহ ব্যয়ে হয়েছে খাওয়ার খরচ। খাওয়ায় কত টাকা খরচ হয়েছে তার হিসেব করি নাই। এছাড়াও আমার মামা কোনো টাকা নেননি।’
স্বপ্ন দেখা এই তরুণী বলেন, ‘গরুর বড় খামারি হতে না পারলেও এবার একটি দুগ্ধ খামার করবো। গাবতলী হাটে এবার বিক্রি করা ছোট ষাঁড়ের ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আমার বিকাশ এজেন্ট, দর্জির কাজ আর ব্যবসার জমানো টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের কয়েকটি গাভীর বাচ্চা কিনবো। সেই বাচ্চা গুলো লালন পালন করে বড় করবো। এ জাতের গাভী অনেক দুধ দেয়। আমার সেই খামারে গাভী গুলোর সাথে মানিকও থাকবে।’
ছোট খামারিদের নানা ধরণের সহযোগিতা দেয় প্রাণীসম্পদ বিভাগ, সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শে হামিদা বলেন, ‘অন্যের সাহায্য ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছে আমার। পড়ালেখা করেও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না, এটা মানতে আমি রাজি নই। আমি চাই আমাকে দেখে যেন সমাজের প্রতিটি মেয়েই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হন। সফলতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন তিনি।
লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বুদ্দু বলেন, ‘হামিদার ৪৫ মণের ষাঁড়টি বিক্রি হয়নি শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।’
লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খান বলেন, ‘হামিদার ষাঁড়টি এবারও বিক্রি হয়নি বলে শুনেছি। এতে হতাশ হয়েছি। দোয়া করি, দরিদ্র কৃষক পরিবারের কলেজ ছাত্রী হামিদার গরুর বড় খামারি হওয়ার স্বপ্নটা যেন পূরণ হয়। বড় খামার করতে সে যদি আমাদের সাহায্য সহযোগিতা চায়, তবে অবশ্যই আমরা সেটি করবো।’
দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, করোনার পর থেকেই দেশে বড় গরুর চাহিদা কমে গেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি হাটেই এবার চাহিদা ছিল মাঝারি আর ছোট গরুর। বেশিরভাগ বড় গরুই এবার অবিক্রিত রয়ে গেছে। এ কারণেই কলেজ ছাত্রী হামিদার গরুটি বিক্রি হয়নি।
তিনি আরো জানান, পাবনা ব্যাঙ্গ মিট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাংশের ওজনে গরু কেনেন। হামিদা চাইলে, সেখানে ষাঁড়টি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এতে আশানুরূপ দাম না পেলেও ষাঁড়টি বিক্রি করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।