মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার সক্ষমতা হয়েছে কিছু কিছু প্রোগ্রামের—এগুলো গেমিং এআই। যেমন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি দল টেক্সাসের একটি পোকার খেলার এআইনির্ভর প্রোগ্রাম পরীক্ষা করে দেখেছে, মানব খেলোয়াড়দের ‘ব্লাফ’ দিতে পারে এটি, আদতে যাকে ‘মিথ্যা বলা’-ই বলা চলে। আরেকটি অর্থনীতিবিষয়ক এআইনির্ভর প্রোগ্রাম নিজের সুবিধা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রশ্নের অর্থ বেছে নিয়েছে ভুলভাবে। (ইজ এআই লায়িং টু মি? সায়েন্টিস্টস ওয়ার্ন অব গ্রোয়িং ক্যাপাসিটি ফর ডিসেপশন, দ্য গার্ডিয়ান)
এই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এআই মানুষের সঙ্গে ইচ্ছে করে প্রতারণা করছে, ব্লাফ দিচ্ছে—এমন বেশ কিছু ঘটনা পাওয়া গেছে। এটি যে আশংকাজনক, তা সত্যি। কিন্তু ঘটনাটা ঘটছে কীভাবে? যদি গেমিংয়ের সময় মানুষের সঙ্গে পোকারে পাল্লা দিতে হয়, তাহলে এআইকে ওভাবেই এলগরিদমে বলে দিতে হবে—হাতে কার্ড এটা থাকলেও অন্যটার দিকে ইঙ্গিত করবে বা এমন কিছু। এখানে এআই কিন্তু নিজে থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মিথ্যে বলছে না, বরং এআইটা বানানোই হয়েছে ‘মিথ্যে বলার জন্য’।
সহজ উদাহরণ দিই। ধরুন, একটা এআইকে প্রোগ্রাম করে দেওয়া হলো, আকাশের রং নীল হলে, আকাশে সূর্য থাকলে তুমি রংটা নীল ছাড়া অন্য কিছু বলবে। এআইটা বাজারে ছাড়া হলো। আপনি প্রশ্ন করলেন, আকাশের রং কী? এআই উত্তর দিল, ‘সবুজ’। এআই কি তবে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যে বলল? তা তো নয়। এটি যে উত্তরটিকে ‘মিথ্যে’ হিসেবে দিয়েছে, তাও নয়। বরং এভাবেই এটির উত্তর দেওয়ার কথা।
অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এটুকু সিদ্ধান্তে আসা যায় যে এআই আসলে ইচ্ছাকৃত মিথ্যে বলছে না, বরং এলগরিদম অনুযায়ী মিথ্যে বলছে, অথবা ভুল করছে। ভুলের বিষয়টি মেনে না নিয়ে উপায় নেই। এলগরিদমটি লিখেছেন কোনো মানুষ। তাঁর বা তাঁদের প্রতি খানিকটা সহানুভূতি রেখে ভাবতে পারেন, এসব এলগরিদম সদ্য যাত্রা শুরু করেছে। আরও নিখুঁত হয়ে উঠতে এগুলোর কিছুটা সময় দরকার। আর যেগুলো মিথ্যে বলার জন্য বা প্রতারণার জন্যই কোডিং করা হয়েছে (যেমন পোকার গেম খেলার প্রোগ্রাম), সেগুলোর ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিতে হলে তা দিতে হবে মানুষের উদ্দেশে—কেউ যেন ইচ্ছাকৃত এ ধরনের এআই না বানান, নিশ্চিত করতে হবে তা।
তবে সবশেষে এ কথাও বলা প্রয়োজন যে ধীরে ধীরে একসময় এআই হয়তো সত্যিই মিথ্যে বলতে শিখে যাবে। সে জন্য চলতি বছর মেশিন লার্নিং বা এআইয়ের শেখার পদ্ধতির ভিত্তি গড়ার কারিগরদের একজন জেফরি হিন্টনের একটি কথা বলা যায়। তিনি নিজ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অনেকে মনে করেন, এআই বোঝে—এ ধারণা ঠিক নয়। আমার ধারণা, এগুলো বোঝে। অনেকের চেয়ে ভালো বোঝে এসব নিউরাল নেটওয়ার্ক (এআই)। অর্থাৎ এআই বুঝতে পারে। তবে এগুলো হয়তো এখনো ‘মিথ্যে’ হিসেবে মিথ্যেটা বলে না। কিন্তু শিগগিরই যে তা বলতে পারবে না, সে কথা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।